রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষায় জাইমা রহমানের বিশ্বে প্রথম হওয়ার খবরটি ভিত্তিহীন
পলিটিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় নামে লন্ডনে কিছু নেই আর এ বিষয়ে বিশ্বে প্রথম হওয়ার মত কোনো পরীক্ষারও অস্তিত্ব নেই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, লন্ডন পলিটিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষায় জাইমা বিশ্বে প্রথম হয়েছেন। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৪ এপ্রিল 'Zakir Khan' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে জাইমা রহমানের ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "আলহামদুলিল্লাহ। অভিনন্দন-অভিনন্দন-অভিনন্দন- লন্ডন পলিটিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক বিষয়ের উপর পড়ালেখা করে অধ্যায়নরত সারা বিশ্বের ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে পলিটিক্যাল সায়েন্স (রাজনৈতিক বিষয়ের উপর) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারা বিশ্বের ছাত্রদাত্রীদের মধ্যে আমাদের প্রাণ প্রিয় নেতা বর্তমান ও আগামী বাংলাদেশের স্বপ্ন জনাব তারেক রহমানের একমাত্র উত্তরাধীকারী জাইমা রহমান প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আদর্শের ও বিএনপি পরিবারের সকলের কাছে তার জন্য দোয়া চাই।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি ভিত্তিহীন। পলিটিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় নামে যুক্তরাজ্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই আর বিশ্বে প্রথম হওয়া সম্ভব রাজনৈতিক বিষয়ক এমন কোনো পরীক্ষা ব্যবস্থারও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
কি-ওয়ার্ড ধরে একাধিক সার্চ করার পরও, লন্ডন বা যুক্তরাজ্যের কোথাও পলিটিক্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মূলত সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা বা স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় (Political Science) পড়ানো হয়ে থাকে। যদিও লন্ডনে কাছাকাছি নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যার নাম লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই)। তবে এলএসই-এর ওয়েবসাইটে রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষা বা জাইমা রহমান সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আবার, রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষায় জাইমা রহমানের বিশ্বে প্রথম হওয়ার তথ্যটিও অসঙ্গতিপূর্ণ। প্রথমত, যুক্তরাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষা নামে কোনো স্বতন্ত্র পরীক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কিত কোনো তথ্যই খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, কোনো পরিক্ষায় বিশ্বে প্রথম হতে হলে সেই পরিক্ষাটিতে বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হয়। কিন্তু অতীতে এ ধরণের কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার বা এ ধরণের পরীক্ষায় কোনো ব্যক্তির প্রথম হবার কোনো তথ্য একাধিকবার সার্চ করার পরেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সাধারণত এ ধরণের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ফলাফল বা প্রতিযোগিদের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
অর্থাৎ রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষায় জাইমা রহমানের বিশ্বে প্রথম হওয়ার তথ্যটি ভিত্তিহীন।
প্রসঙ্গত, একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাইমা রহমান ২০১৯ সালে বার-অ্যাট-ল সনদ অর্জন করেন। এছাড়া সম্প্রতি জাইমা রহমান সম্পর্কিত আর কোনো খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
সুতরাং রাজনৈতিক বিষয়ক পরীক্ষায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের বিশ্বে প্রথম হওয়ার ভিত্তিহীন তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।