ডাকাতির ঘটনার সাক্ষাতকারের ভিডিও এডিট করে ধর্ষণের বলে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গণমাধ্যমে ডাকাতির ঘটনার বর্ণনার ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে ধর্ষণের বর্ণনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে একটি মেয়েকে তার মায়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ভিডিওতেও একজন নারীকে এই সংক্রান্ত মন্তব্য করতে দেখা যায়। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২২শে ফেব্রুয়ারি ‘Abir Hassan’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “মানুষ কতটা নি*ষ্ঠুর হলে, মায়ের সামনে থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে ধ*র্ষণ করে। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!😭”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি সম্পাদনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। মূলত রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসায় ডাকাতি হলে ডাকাতেরা বাসার লোকজনদের (আলোচ্য নারী, তার মেয়ে) বাসার বাইরে যেতে বলে এবং বাসার মালামাল নিয়ে যায়। এসময়ে গণমাধ্যমে ঐ নারীর দেয়া ঘটনার বর্ণনা এডিট করে ধর্ষণের ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে ঐ নারীকে বলতে শোনা গেছে, “আমার মেয়েরে ধরে নিয়ে যাইতেছে৷ আমি বলছি বাবা আমার হাফেজ মেয়ে, পর্দা করে। জীবন ভিক্ষা দাও৷ বাইরে কীভাবে… বলো কীভাবে বাইর হয়ে যাই। বলে বাইর হ বাড়ি থেকে চুপচাপ কোণার রুমে নিছে৷ এই বাংলাদেশটা আশা করি নাই। ছোটবেলা থেকে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এই কবিতাটা পড়ছি। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যখন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করছিলাম, তখন প্রতিটা মানুষ বলছে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এই বাংলা চাই নাই, যেই বাংলায় আমার মাতৃভূমিতে আমার নিরাপত্তা নাই। আমার ঘরে আমার নিরাপত্তা নাই।”
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'মাইটিভি' এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর "মোহাম্মদপুরে ডা'কা'তি'র ভ'য়া'বহ বর্ণনা দিলেন বাড়ির ম্যানেজার" শিরোনামে প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওর নারীর মূল (দীর্ঘ সংস্করণের) সাক্ষাতকারের ভিডিওটি পাওয়া যায়। প্রিভিউ দেখুন--
ভিডিওটির ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী অংশের সাথে প্রচারিত ভিডিওটির কিছু অংশের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওতে ঐ নারীর সাক্ষাতকার থেকে বোঝা যায় তাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছিল এবং ডাকাত তাদের বাসা থেকে মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং তাদেরকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে। মূল সাক্ষাতকারে ধর্ষণের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
সাক্ষাতকারে ঐ নারী জানান, “আমার মেয়েরে ধরে নিয়ে যাইতেছে (বাসার বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য), আমি বলছি বাবা আমার হাফেজ মেয়ে, পর্দা করে৷ জীবন ভিক্ষা দাও। বাইরে কীভাবে বলো বাইর হইয়া যাই। বলে (ডাকাতেরা) বাইর হ বাড়ির থেকে চুপচাপ। কোণার রুমে নিয়েছে নিয়ে ঐ ভাড়াটিয়ার ফ্রিজ, মেশিন, জিনিসপত্র এগুলা সব বাইর করে নিয়া গেছে”।
অর্থাৎ "কোণার রুমে নিয়েছে নিয়ে" এই বাক্যটির বাকি অংশ কেটে শুধু এটুকু রেখে দেওয়া সহ বিভিন্ন অংশের ভিডিও কেটে কেটে ক্লিপ সম্পাদনার মাধ্যমে পরিবর্তন করে ডাকাতির ঘটনার বর্ণনাকে ধর্ষণের বর্ণনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনার বর্ণনার ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।