মাজারে হামলার ভিডিও হিন্দুদের স্থাপনায় হামলার বলে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভিডিওটি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মাজারের একটি অনুষ্ঠানে একদল মানুষের ভাঙচুর করার সময় ধারণ করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বেশকিছু লোক মিলে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন সামগ্রী ভাঙচুর করছেন। ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির একটি প্রচলিত বাক্য ব্যবহার করে এই সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৬ মার্চ ‘जयब्रत रॉय’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “যারা এখনো বিশ্বাস করেন, "মোরা এক বিন্তে দুটি কুসুম".........তারা ভালো করে দেখুন ভিডিওটা”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। এটি হিন্দুদের স্থাপনায়-আয়োজনে মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক হামলা করার ভিডিও নয়। ভিডিওটি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে একদল লোকের মাজারের আয়োজনে ভাঙচুরের ঘটনার দৃশ্য।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে ফেসবুকে ‘হেরাবন পাক দরবার শরীফ’ নামক একটি অ্যাকাউন্টে আলোচ্য ভিডিও সহ প্রকাশিত একটি রিলস পোস্ট পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বীরাহিমপুর গ্রামে অবস্থিত রহিম শাহ ভান্ডারীর মাজার শরীফ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লুট করা হয়েছে মাজারের সম্পদ (সংক্ষেপিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সার্চ করে ফেসবুকে আলোচ্য ঘটনার একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। লাইভ ভিডিওর ক্যাপশনেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয় এবং ভিডিওতে সমজাতীয় একটি ঘটনার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। একই তথ্য পাওয়া যায় দৈনিক 'প্রথম আলো'র সংবাদ প্রতিবেদনেও।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় তিন দিনব্যাপী ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে একটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় লাঠিমিছিল কর্মসূচির পর এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
আরো উল্লেখ করা হয়- ‘রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজার’ নামের এ মাজারটি উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহীমপুর গুচ্ছগ্রামে অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত মাজারে বার্ষিক ওরস হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য ভক্তদের অংশ নেওয়ার জন্য প্রচার চালায় মাজার কর্তৃপক্ষ। মাজারের সামনে মঞ্চ ও বড় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তদের জন্য শামিয়ানা দিয়ে তিনটি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল।
আলোচ্য ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সহ ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আরেক সংবাদ মাধ্যম 'দৈনিক কালবেলা'। গণমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সাথে আলোচ্য ভাইরাল দাবিযুক্ত ভিডিওটির কিছু বিষয়বস্তুর মিলও পাওয়া যায়। ভিডিও প্রতিবেদনটির প্রিভিউ দেখুন--
ভিডিও প্রতিবেদনের ফুটেজের বিষয়বস্তুর সাথে (বামে) আলোচ্য ভাইরাল দাবিযুক্ত ভিডিওটির বিষয়বস্তুর (ডানে) পাশাপাশি মিল দেখুন--
এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে প্রচারিত ফুটজেটি পাঠিয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল হকের সাথে যোগাযোগ করেছে বুম বাংলাদেশ। তিনি নিশ্চিত করেছেন "ফুটেজটি ভিডিওটি ঘোড়াঘাটের রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজারের। এতে ২০২৫ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী তৌহিদী জনতা কর্তৃক মাজারে আক্রমণের চিত্র। এই ঘটনার কোনও হিন্দু বা সাম্প্রদায়িক বিষয়বস্তু ছিল না।"
অর্থাৎ ভিডিওটি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে একদল লোকের মাজারের আয়োজনে ভাঙচুরের ঘটনার দৃশ্য।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে মাজার ভাঙচুরের ভিডিও হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থাপনায়-আয়োজনে হামলার বলে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।