এটি কবরের 'আজাব' এর আগুন নয়
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সিরাজগঞ্জের কবরস্থানের আগুনটি পাতা ও পলিথিন দিয়ে লাগানো হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে একটি কবরস্থানে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। দেখুন এমন কয়েকটি ভিডিও লিংক এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৪ জানুয়ারি '❣️কওমি মহিলা মাদ্রাসা❣️' নামের ফেসবুক গ্রুপ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, 'সিরাজগঞ্জ শহরের রহমতগঞ্জ কবর স্থানে (10.01.2022) এক জনের কবরে হঠাৎ দাঊ দাঊ করে আগুন জ্বলে ওঠে। হে আল্লাহ আপনি আমাদের সবাইকে মাফ করে দিন'। অর্থাৎ মনে করা হচ্ছে, দৈবক্রমে বা অলৌকিকভাবে সিরাজগঞ্জের সেই কবরে হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠেছে। এছাড়া সুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, বাংলাদেশি গণমাধ্যম আরটিভিকে। দেখুন পোস্টের স্ক্রিনশট--
আরেকটি স্ক্রিনশট দেখুন যেখানে এই আগুনকে কবরের 'আজাব' বলে অভিহিত করা হচ্ছে--
অর্থাৎ কবরে লাগা আগুনকে অলৌকিক 'কবরের আজাব' হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কবরে আগুন লাগার ভিডিওটির সাথে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। এ সংক্রান্ত একাধিক খবরে আসল ঘটনাটির হদিস পাওয়া গেছে। প্রথমত, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির বর্ণনায় আরটিভিকে সুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে গত ১৩ জানুয়ারিতে প্রকাশিত 'কবরে আগুন, ভিডিও ভাইরাল' শিরোনামে একটি খবর খুঁজে পাওয়া গেছে আরটিভি অনলাইনে। সেখানে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জের পৌর এলাকার রহমতগঞ্জ কবরস্থানের একটি কবর থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। দেখুন--
কিন্তু আরটিভির এই খবরটিতে কবরস্থানের খাদেম আফজাল হোসেন ও মাসুদ রানা'র বরাতে বলা হয়, 'কবরস্থানের কিছু পলিথিন একত্রিত করে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। আমরা মাগরিবের নামাজ শেষে একটি কবরে আগুন জ্বলছে দেখতে পাই।'
অর্থাৎ আরটিভির সেই প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি, হঠাৎ একটি কবরে আগুন জ্বলে উঠেছে। বরং একাধিক ব্যক্তি সেই কবরস্থানে কিছু পলিথিন একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে স্থানীয়রা দাবি করছে।
পরবর্তীতে ১৫ তারিখে মানবজমিন অনলাইনে 'সিরাজগঞ্জে কবরে আগুনের ভিডিও ভাইরাল, যা বললেন স্থানীয়রা' শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খবরটির প্রতিবেদককে স্থানীয় চা দোকানি মোস্তফা শেখ বলেন, আমরা মাগরিবের নামাজ শেষ করে বের হয়ে দেখি কবরস্থানে আগুন জ্বলছে। মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের হতে দেখে কয়েকজন ছেলে দৌড়ে পালায়। তবে কারা এরা সেটা চিনতে পারিনি। দেখুন--
তাছাড়া যমুনা টিভি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বরাতে বলা হয়, তদন্ত করে অভিযুক্ত ছেলেদের আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া উক্ত কর্মকর্তা আরো বলেন, 'তবে আমার মনে হয় ওরা টিকটক বানানোর জন্যই এ কাজ করেছে'। কেউ যেন এ নিয়ে মিথ্যে সংবাদ প্রচার না করে সে দিকটা খেয়াল রাখতে আহ্বান জানান তিনি। দেখুন--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। এ সংক্রান্ত আরেকটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দেখুন অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজবাংলা২৪ এ।
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। এ ঘটনার একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
অর্থাৎ সিরাজগঞ্জের কবরস্থানে পলিথিন দিয়ে ইচ্ছা করে আগুন লাগার ঘটনাটিকে কোনো দৈব বা অলৌকিক ঘটনা বলে দাবি করা বিভ্রান্তিকর।