ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার?
ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করা সংক্রান্ত বিক্ষোভকারীদের দাবি বিবেচনা করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেডসে একটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ইসরাইলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পোস্টটি দেখুন এখানে।
গত ২৭ এপ্রিল 'tinaahmad30hotmailcom' ইউজার নেম এর অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে উল্লেখ করা হয় "Uni of Rochester is cutting academic ties with Israel as demanded by the student protesters."। নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করা সংক্রান্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনা করা হয়নি বলে জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার কর্তৃপক্ষ।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার কমিউনিটির জন্য পরিচালিত নিউজপোর্টাল 'Campus Times' এর "Recording shows University statement inaccurate about Gaza encampment meeting" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারে গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে মিটিং শেষে ঘোষণা করেছে ইসরায়েলের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে।
এই খবরটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিনিকেশন বিভাগ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানায়, বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনার সময়ে তাদের দাবির বিষয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের কোনো দাবি আলোচনার জন্যও গ্রহণ করা হয়নি। ইসরায়েলের সাথে ভবিষ্যত একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি এবং দেবেও না।
এরপর 'Campus Times' বলছে, সেদিন প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সাথে বিক্ষোভকারীদের মিটিংয়ের একটি রেকডিং তাদের হাতে এসেছে। সেই রেকডিং অনুযায়ী, মিটিং শেষে বিক্ষোভকারীরা যে ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের সাথে নিশ্চিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাচ্ছে, তা তারা ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও যে বিবৃতি দিয়েছে তাও অনেকাংশে অসত্য।
রেকডিং অনুযায়ী, প্রশাসনের কেউ ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিক্ষোভকারীদের দাবিটি অর্জিত হবে এমন নিশ্চিয়তা দেয়নি। তবে ব্ল্যাক স্টাডিজ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জেফ্রি ম্যাককিউন বারবার বলেছেন, দাবি অর্জনের বিষয়টি ফ্যাকাল্টি সিনেটে আলোচনার মাধ্যমে বিবেচনা করা হতে পারে। মিটিংয়ের শুরুতে প্রশাসনের প্রতিনিধিরা বারবার বলেছেন, ফ্যাকাল্টি সিনেট হল প্রকৃত স্থান যেখানে ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া এই বিবৃতির সাথে সাংঘর্ষিক বলে বর্ণনা করেছে 'Campus Times'। প্রতিবেদনটির একটি স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ 'Campus Times' বলেছে, ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয় ছিন্ন করছে বলে বিক্ষোভকারীরা যে নিশ্চিত ঘোষণা দিয়েছে তাও সঠিক নয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি এবং স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে এমন আলোচনাও বিশ্ববিদ্যালয় করবে না, সেটাও সঠিক নয়।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ 'Campus Times' কে উদ্দেশ্য করে "Statement to the Campus Times" শিরোনামে আরেকটি বিবৃতি দিয়েছে ৩০ এপ্রিল। শুরুতেই বলা হয়, ক্যাম্পাস টাইমের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সেদিনের মিটিংয়ের আধেয় নিয়ে জানতে যে প্রশ্ন করা হয়েছে এর প্রেক্ষিতে এই বিবৃতি।
বিবৃতিতে সেদিনের বিক্ষোভকারীদের সাথে মিটিংয়ের বিষয়, ইসরায়েলের সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে একাডেমিক সম্পর্কের বিষয়, ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারের ফ্যাকাল্টি সিনেট কিভাবে কাজ করে, কোনো বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার সময়, সিনেটের এখতিয়ার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়। যেমন বলা হয়, সিনেটের কোনো সিদ্ধান্ত সুপারিশ আকারে পেশ করা হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে আবার নাও পারে তবে সিনেটের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নয়।
যাইহোক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করা সংক্রান্ত বিক্ষোভকারীদের দাবি বলা হয়, ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার বিক্ষোভকারীদের দাবি বিবেচনা করেনি এবং ইসরায়েলি ইনস্টিটিউশনের সাথে একাডেমিক সম্পৃক্ততার অবসানে আলোচনার জন্য রাজি নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে ইসরায়েলের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রসঙ্গত গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা যুদ্ধ বিরতির আহবান এবং ইসরাইলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানায়।
সুতরাং ইসরাইলের সাথে রচেস্টার ইউনিভার্সিটি একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে বলে যে দাবি প্রচার করা হচ্ছে থ্রেডসে, তা সঠিক নয়।