ভিন্ন ঘটনার দুটি ছবি যুক্ত করে কোরআন অবমাননাকারীর হাতে পঁচন ধরার দাবি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভিন্ন ব্যক্তি ও ভিন্ন ঘটনার দুটি ছবি কোলাজ করে ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে, নরওয়েতে কোরআন শরীফে আগুন দেয়া ব্যক্তির হাতে পঁচন ধরেছে। দেখুন এমন কিছু লিংক এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৯ জুন 'Liton Sarkar' নামের একটি আইডি থেকে দুটি ছবির কোলাজ পোস্ট করে দাবি করা হয়, নরওয়েতে কোরআন শরীফে আগুন দেয়া ব্যক্তির হাতে পঁচন ধরেছে। কোলাজ ছবিটির উপরের অংশে হাসপাতালে শয্যাশায়ী এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। নিচের অংশে মাথায় ক্যাপ পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে যার হাতে বই-সদৃশ একটি বস্তু আগুনে পুড়ছে। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট-
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কোরআন শরীফে আগুন দেয়া ব্যক্তির হাতে পঁচন ধরার দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, ছবিটির নিচের অংশে মাথায় ক্যাপ পরিহিত ব্যক্তির ছবিটি যাচাই করে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষেই এটি কোরআন শরীফে আগুন দেয়ার ছবি। ২০১৯ সালে নরওয়েতে এই ঘটনাটি ঘটে। দেখুন সেই ছবিসহ রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম আরটি-এর একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট--
ছবিতে দৃশ্যমান ব্যক্তিটি সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, তার নাম লার্স থরসেন (Lars Thorsen) যিনি 'স্টপ ইসলামাইজেশান অব নরওয়ে' নামের একটি সংগঠনের নেতা। ২০১৯ সালে পূর্ব ঘোষিত এক সমাবেশে পুলিশের হুশিয়ারী উপেক্ষা করে জনসম্মুখে কোরআন শরীফের একটি কপিতে আগুন লাগিয়ে দেন লার্স। পুলিশ সতর্ক করলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই সমাবেশ করতে অনুমোদন দিয়েছিল।
এছাড়া নরওয়েভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমেও তার একই নাম পাওয়া গেছে। দেখুন সেই লিংক এখানে।
কিন্তু পোস্টের কোলাজ ছবির উপরের অংশে হাসপাতালে শয্যাশায়ী যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি কোরআনে আগুন দেয়া লার্স থরসেন নন। প্রভাবশালী বৃটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে হুবহু হাসপাতালে শয্যাশায়ী ওই ব্যক্তির ছবিটি পাওয়া গেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর নাম পল গেলর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন রাজ্যের এই ব্যক্তির দুই হাতের আঙ্গুল বিরল ধরণের এক প্লেগের সংক্রমণের ফলে কালো হয়ে গেছে। পলের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরটিতে আরো বলা হয়, প্লেগের কারণে তিনি এখন আর সংকটাপন্ন অবস্থায় নেই তবে তিনি হাতের আঙ্গুল হারানোর আশংকা করছেন। দেখুন ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট--
অর্থাৎ নরওয়েতে ২০১৯ সালে কোরআন শরীফে আগুন দেয়া লার্স থরসেন এবং প্লেগ আক্রান্ত পল গেলর্ড একই ব্যক্তি নন। এছাড়া এএফপি সহ অনেক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা এরইমধ্যে এই দাবিটি যাচাই করে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সুতরাং ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ভিন্ন দুই ব্যক্তির ছবি যুক্ত করে কোরআনে আগুন দেয়া ব্যক্তির হাতে পঁচন ধরার দাবি প্রচার করা বিভ্রান্তিকর।
এছাড়া, নরওয়েতে কোরআন শরীফে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে বুম বাংলাদেশের আগের একটি প্রতিবেদন পড়ুন, নরওয়ের পুরোনো ঘটনার খবর নতুন করে প্রচার।