ভারতের ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবরের সাথে পুরোনো ছবি প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, একাধিক পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবিকে ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ত্রিপুরায় সাম্প্রতিক মুসলিম বিরোধী সহিংসতার ছবি এগুলো। দেখুন এমন একটি পোস্ট এখানে।
গত ৩০ অক্টোবর '𝐀𝐋𝐎ツ - আলো' নামের ফেসবুক পেজ থেকে চারটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৬টি মসজিদ-ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আরো বলা হয়, এই চারটি ছবি সাম্প্রতিক ত্রিপুরায় এই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সংক্রান্ত ঘটনার। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
পোস্টকৃত চারটি ছবি আলাদাভাবে দেখুন-
প্রথম ছবি:
দ্বিতীয় ছবি:
তৃতীয় ছবি:
এবং সর্বশেষ ও চতুর্থ ছবি:
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, এই পোস্টে যুক্ত একাধিক ছবি পুরোনো এবং ভিন্ন ঘটনার। রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুলস ব্যবহার করে দেখা গেছে, ছবিগুলো ভারতের গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ঘটনা সংক্রান্ত খবরের সাথে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দ্য প্রিন্ট এর অনলাইন ভার্সনের একটি প্রতিবেদনে প্রথম ছবিটি পাওয়া গেছে। খবরটির শিরোনাম ছিল, 'Violent clashes break out between BJP, CPM in Tripura, opposition party offices set on fire'। দেখুন স্ক্রিনশট--
দ্য প্রিন্টের খবরটির বিস্তারিত অংশে বলা হয়, গত ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া-সিপিআই (এম) এবং ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি এর মধ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে তীব্র সংঘাতের ঘটনা ঘটে ত্রিপুরার আগরতলাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, বিজেপি-সিপিআই (এম) এর সংঘাতে আগরতলায় যানবহনে আগুন দেয়া হয়। অর্থাৎ এই ঘটনার সাথে গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ত্রিপুরায় ঘটে যাওয়া মুসলিম বিরোধী সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ সংক্রান্ত 'নিউজ এইটিন' এর একটি খবরেও একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। দেখুন--
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
দ্বিতীয় ছবিটির ব্যাপারে জানা যায়, এটি মূলত ২০১৯ সালের আসামের ছবি। ভারতের 'সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট' এর প্রতিবাদে আসামের গুহাটিতে বিক্ষোভের সময়ের ছবি এটি। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর 'CAB protests: Passengers stranded at Guwahati airport as Assam remains on boil' শিরোনামে খবর প্রকাশ করে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এই খবরটিতে আলোচ্য ছবিটি প্রকাশ করা হয় এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের বরাত দিয়ে। দেখুন--
এ সংক্রান্ত 'দ্য প্রিন্ট' এর একটি খবরের স্ক্রিনশট দেখুন এখানে--
খবরটি পড়ুন এখানে।
একইভাবে তৃতীয় ছবির ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এটি সাম্প্রতিক ত্রিপুরার উত্তেজনার সাথে সম্পর্কিত নয়। এটিও মূলত সিপিআই (এম) বনাম বিজেপি'র সংঘর্ষের পুরোনো ছবি, যেটি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হয়। ছবিটির ফটোগ্রাফারের নাম অভিষেক সাহা। দেখুন-
গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এই খবরে আরো বলা হয়, সেই সংঘাতে ১০ জনের বেশি আহত হয় এবং ৬টির বেশি যানবহনে আগুন দেয়া হয়। সিপিআই (এম) এর প্রাদেশিক কেন্দ্রীয় অফিসেও হামলা করা হয়। প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
ছবিটি 'দ্য ওয়্যার' এও প্রকাশিত হয়েছিল। দেখুন এখানে।
তবে শেষ ছবিটি যাচাই করে দেখা গেছে, এটি সাম্প্রতিক ত্রিপুরায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্তৃক মসজিদ ও মুসলিমদের বাড়িতে আগুন দেয়ার একটি ভিডিও থেকে নেয়া হয়েছে। দেখুন টুইটারে পোস্ট করা সেই ভিডিওটি--
ভিডিও লিংক এখানে।
এছাড়া 'ইস্টমোজো' নামক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিওটি পাওয়া গেছে। দেখুন--
অর্থাৎ ত্রিপুরার মুসলিম বিরোধী উত্তেজনার বলে দাবি করা ফেসবুকের পোস্টের চারটি ছবির প্রথম তিনটিই ভিন্ন ঘটনার এবং সাম্প্রতিক নয়।
সুতরাং ভারতের ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবরের সাথে একাধিক ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবি পোস্ট করা হয়েছে যা বিভ্রান্তিকর।