স্বামীর প্রতি ক্ষোভ প্রশমিত করতে নারীদের চিৎকারের ভিডিও নয় এটি
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সামগ্রিক রাগ, ক্ষোভ ও হতাশা নিরাময়ের জন্য Rage ritual নামের এই রীতি পালন করে থাকেন অনেক নারী।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, স্বামীর প্রতি ক্ষোভ কমানোর জন্য এই বাগানে গিয়ে চিৎকার এবং মাটিতে লাঠিপেটা করছেন নারীরা। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৪ জুন 'Redoanuzzaman' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "স্বামীর প্রতি রাগ কমানোর জন্য মহিলাদের মিলন মেলা ❤️ এই বাগানে সব মহিলারা আসে তাদের স্বামীদের প্রতি খোব গুলো প্রকাশ করার জন্য 🤣🤣🤣 কিছু হইলো 🥴🥴🥴 আমিও যাবো ভাবতেছি😁😁😁😁"। ভিডিওটিতে বনায়নের মধ্যদিয়ে যাওয়া একটি সরু রাস্তায় কয়েকজন নারীকে চিৎকার করতে এবং মাটিতে লাঠিপেটা করতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, স্বামীর প্রতি ক্ষোভ প্রশমিত করতে আলোচ্য ভিডিওতে এমন আচরণ করছেন নারীরা এই দাবিটি সঠিক নয়। বরং জীবনের সামগ্রিক অপ্রকাশিত রাগ, ক্ষোভ প্রশমন ও সব ধরণের হতাশা থেকে মুক্তির জন্য এভাবে চিৎকার ও মাটিতে লাঠিপেটা করছেন নারীরা। মিয়া বান্দুচ্চি নামে এক নারী 'Rage ritual' নামের এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো নারীদের চিৎকার এবং লাঠিপেটার কারণ জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম 'USA Today'র ওয়েবসাইটে গত ৮ মে "Women are paying big money to scream, smash sticks in the woods. It's called a rage ritual." শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আমেরিকা ও কানাডায় Rage ritual নামের একটি প্রথা গত কয়েকবছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। এই প্রথা অনুযায়ী নারীরা তাদের মনের গভীরে লুকায়িত রাগ ও ক্ষোভ প্রশমন এবং হতাশাকে দূর করার জন্য জঙ্গলে গিয়ে চিৎকার ও মাটিতে লাঠিপেটা করেন। মিয়া বান্দুচ্চি নামের এক নারী প্রথম এই পদ্ধতি চালু করেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেক গণমাধ্যম ফক্স নিউজের ওয়েবসাইটে গত ২৬ মে "In new viral trend, women spend up to $8K on rage rituals that include screaming ceremonies, breaking things" শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, একই তথ্য। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, নারীদের মনের ভিতরে লুকায়িত ক্ষোভ দূর করে হতাশা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে এই পদ্ধতি চালু করেন মিয়া বান্দুচ্চি নামের এক নারী। এই পদ্ধতিতে নারীরা তাদের জীবনের প্রতি তৈরি হওয়া ক্ষোভ বের করে দিতে চিৎকার ও মাটিতে লাঠিপেটা করে থাকেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে নিউজ নাইন লাইভ, ইয়াহু এবং আনহেরাল্ডের ওয়েবসাইটেও একই তথ্য নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত মিয়া বান্দুচ্চি নামে একজন লেখিকা ও এক্টিভিস্ট নারীদের জন্য এই প্রথা চালু করেন। ওই প্রথা অনুযায়ী জঙ্গলে চিৎকার ও লাঠিপেটার মাধ্যমে নারীদের মনে লুকায়িত রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টে দেখানো ভিডিওটিতে নারীরা স্বামীর প্রতি রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য চিৎকার করছেন না। বরং জীবনের প্রতি সামগ্রিক রাগ ও হতাশা দূর করার জন্য তারা ওই প্রথা পালন করে থাকেন।
সুতরাং স্বামীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশে ভিডিওতে নারীরা চিৎকার ও লাঠিপেটা করছেন বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।