হাতিরঝিলে বাইক ছিনতাইয়ের এই ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, নির্জন স্থানে অবস্থানকালে ছিনতাইয়ের ব্যাপারে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়।

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিলে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে পিস্তল দেখিয়ে বাইক ছিনতাই করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি 'Junior Rashel 1000' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "আজকে দিনে দুপুরে বেলা হাতিরঝিলে সবার সামনে পিস্তল দিয়ে বাইক ছিনতাই দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না"। ভিডিওটিতে একটি রাস্তায় দিনের আলোতে এক ব্যক্তিকে মারধর করে তার কাছ থেকে একটি বাইক ছিনতাই করে পালাতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, কয়েকজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মিলে রাজধানীতে পাঠাও চালকদের নির্জন স্থানে অবস্থানকালে ছিনতাইয়ের ব্যাপারে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে সচেতনতামূলক আলোচ্য ভিডিও নির্মাণ করেন। ভিডিও নির্মাণের অংশ হিসেবে হাতিরঝিলের ২ নম্বর ব্রিজের মহানগর হাউজিংয়ের পূর্ব পাশের এলাকায় উক্ত দৃশ্যটি ধারণ করা হয়।
হাতিরঝিলের রাস্তায় ছিনতাইয়ের ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পরিচালিত ওয়েবসাইট ডিএমপি নিউজে আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) "হাতিরঝিলে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আসলে একটি শুটিংয়ের দৃশ্য" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "রাজধানীর হাতিরঝিলে দিনে-দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে মোটরসাইকেল ছিনতাই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হলো। হাতিরঝিলে ওভারপাসের নিচে ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ চার যুবকের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে সেটি আসলে প্রকৃত কোন ছিনতাই এর ঘটনা নয়। এটি একটি সতর্কতামূলক ভিডিও তৈরির শুটিংয়ের দৃশ্য। কয়েকজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কর্তৃক রাজধানীতে পাঠাও চালকদের নির্জন স্থানে অবস্থানকালে ছিনতাইয়ের ব্যাপারে সতর্ক করার উদ্দেশে সচেতনতামূলক একটি ভিডিও নির্মাণের অংশ হিসেবে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) সকাল আনুমানিক ১১:০০ ঘটিকার দিকে হাতিরঝিলের ২ নম্বর ব্রিজের মহানগর পূর্ব পাশের এলাকায় দৃশ্যটি ধারণ করা হয়। ভিডিও তৈরিতে যে পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও একটি খেলনা পিস্তল। জনসচেতনতামূলক ভিডিওটি তৈরি করে ফেইসবুকে পোস্ট করলে পরবর্তীতে কেউ কেউ সেই ভিডিওর খন্ডিতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসেবে ছড়িয়ে দেয়। পূর্ণাঙ্গ ও প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে না জেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরণের খন্ডিত ভিডিও বা সংবাদ প্রচারে জনমনে শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। প্রকৃত ঘটনা যাচাই না করে এ ধরণের খন্ডিত ভিডিও বা সংবাদ প্রচারে সতর্ক থাকার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটির একটি দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে জানানো হয়, ভাইরাল হওয়া ঘটনাটি ছিল সতর্কতামূলক ভিডিও শুটিং। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এছাড়া ঢাকা পোস্ট, কালের কণ্ঠ এবং প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
পরবর্তীতে আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'Sakib Raj' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে আপলোডকৃত একটি শুটিংয়ের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা থাকতে দেখা যায়, "এখানে একটা সতর্কতা মূলক ভিডিও করার জন্য কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু মানুষ এই ভিডিওটাকে অল্প একটু ক্রপ করে ফুল ভিডিওটা না ছেড়ে সেটা ভাইরাল করে দেয়। ভাই আমরা কোন ছিনতাইকারী না আমরা content creator. দেশের পরিস্থিতি এখন যেভাবে যাচ্ছে সেই ক্ষেত্রে এখন যেভাবে ছিনতাই ডাকাতি হচ্ছে ওইটার উদ্দেশ্যে আমরা একটা ভিডিও বানিয়ে ছিলাম দেশবাসীর জন্য, দেশবাসীকে সতর্ক করার জন্য। কিন্তু, ভাই আপনারা তো আমাদেরকেই ছিন্তাইকাড়ি বানায় দিলেন। প্লেস এগুলা করা বন্ধ করেন কেউ আজেবাজে ভাবে ভিডিওটা পোস্ট করবেন না"। পোস্টটিতে আলোচ্য ভিডিওটিতে দেখানো স্থানেই কয়েকজন ব্যক্তিকে রাস্তায় ভিডিও শুটিং করতে দেখা যায়। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। আলোচ্য ভিডিওটি হাতিরঝিলে ঘটে যাওয়া কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনার নয় বরং ছিনতাইয়ের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য একটি শুটিংয়ের দৃশ্যকে সত্যিকারের ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং হাতিরঝিলে ছিনতাইয়ের শুটিংয়ের দৃশ্যকে সত্যিকারের ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।