ভারতে সম্প্রতি মাইকে আজান নিষিদ্ধের সাথে সমবেত আজানের ঘটনা সম্পর্কহীন
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভিডিওটি ২০২০ সালের কোভিড লকডাউনের সময় পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া এলাকায় রাস্তায় এভাবে আজান দেয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কিছু আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে যে, ভারতে লাউডস্পিকার অর্থাৎ মাইকে আজান নিষিদ্ধ করায় মুসলিমরা একত্রিত হয়ে রাস্তায় সমবেতভাবে আজান দিচ্ছে এবং এটি এর ভিডিও। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৭ এপ্রিল 'JR Biplob Chowdhury' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, 'ভারতে স্পিকারে আজান নিষিদ্ধ করায় সবাই একত্রিত হয়ে চলছে রোড_পথে আজান !!' ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে যে, পোস্টে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর এবং ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়। ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে ২০২০ সালের কোভিড লকডাউন শুরু হওয়ার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার পিলখানা এলাকায় মুসলমানদের রাস্তায় সম্মিলিতভাবে আজান দেয়ার ঘটনা অর্থাৎ দুই বছর আগের।
ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাতের বেলায় কয়েকজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে উচ্চস্বরে আজানের বাণী উচ্চারণ করছেন। ভিডিওর ক্যাপশন নিয়ে কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে 'Nitin Thakur' নামের একটি আইডি তে ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল পোস্ট করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটিতে করা দাবিটিকে গুগল অনুবাদ করলে দেখা যায়, এতে বলা হয়েছে "If the mosque is closed then it starts on the road, how to explain it to them?"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
ভারতে তখন কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সময় যখন মসজিদ মন্দির সহ সব ধরণের জনসমাগম বন্ধ করা হয়, এবং প্রথম ধাপের লকডাউন শুরু হয় তখন মুসলিমরা রাস্তায় নিরাপদ সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে এই আজান দিচ্ছিলেন। এটিকে 'Nitin Thakur' নামের আইডি থেকে নেতিবাচকভাবে প্রচার করা হয়েছিল, যে মুসলিমরা কোভিডের কারণে মসজিদ বন্ধ থাকায় রাস্তায় প্রার্থনা করা শুরু করে দিয়েছে, তাদের বুঝাবে কিভাবে?
পরে 'Nitin Thakur' নামের ব্যক্তির পোস্টটি শেয়ার করে 'Varda Khan' নামের আরেকটি আইডি থেকে ২০ এপ্রিল একটি পোস্ট করা হয়, যে পোস্টের গুগল ট্রান্সলেশনে দেখা যায় এতে বলা হয়, ভিডিওটি ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে, মুসলিমরা বিশ্বাস করে যদি কোন রোগবালাই ছড়িয়ে পরে, রাতে ইশার নামাজের পর আজান দিলে সে রোগবালাই হ্রাস পায় এবং এই আজান নামাজের জন্য আহ্বান করার জন্য নয়। দেখুন ওই পোস্টের ট্রান্সলেশন করা স্ক্রিনশট--
এদিকে, ভিডিওটির কি-ফ্রেম কেটে সার্চ করার পর এটি 'Oneindia Kannada' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়, যা ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল আপলোড করা হয়। সেখানে ভিডিওটির ডেসক্রিপশনে বলা হয়, ভারতে লকডাউনের কারণে মসজিদ মন্দির সব বন্ধ হয়ে গেলে ইবাদতের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়, তাই মুসলিমরা রাস্তায় দাড়িয়ে ইবাদত করছে। দাবিটি একটু ভিন্ন হলেও কোভিড সম্পর্কিত। দেখুন ইউটিউব ভিডিওটি--
উল্লেখ্য সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্র সহ কয়েকটি রাজ্যে মসজিদে লাউডস্পিকারে বা মাইকে আজান নিষিদ্ধ করা ও এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। এরই মধ্যে ভারতের সামাজিক মাধ্যমেও ভিডিওটি একই রকম দাবিতে ভাইরাল হয়। এর প্রেক্ষাপটে ভারতের তথ্য যাচাই সংস্থা Altnews, Fact crescendo, The quint সহ বহু প্রতিষ্ঠান দাবিটিকে মিথ্যে হিসেবে প্রমাণ করে।
আলোচ্য ভিডিওটি ভাল করে দেখলে দেখা যায়, এক মিনিট ২৭ সেকেন্ড থেকে ৩২ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ে 'Shimla Biryani' বা 'শিমলা বিরিয়ানি' নামের একটি রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড চোখে পড়ে। যা বাংলা ও ইংরেজি উভয় মাধ্যমে লেখা। ভারতের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা Altnews দেখেছে, শিমলা বিরিয়ানি রেস্টুরেন্টটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার পিলখানা এলাকায় অবস্থিত। রেস্টুরেন্টটির সঙ্গে Altnews এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে, জানানো হয় ভিডিওটি ২০২০ সালের শুরুর দিকে প্রথম দফায় যখন কোভিড লকডাউন চলছিল তখন কোন একদিন ধারণ করা হয়।
অর্থাৎ এটি দুই বছর আগের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের একটি ভিডিও, যা সম্প্রতি আজান নিষিদ্ধের ঘটনার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, ২০২০ সালের প্রথম কোয়ার্টারে কোভিড লকডাউন চলাকালে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার রাস্তায় সমবেত আজান দেয়ার একটি ভিডিওকে সম্প্রতি ভারতের কয়েকটি রাজ্যে লাউডস্পিকারে বা মাইকে আজান নিষিদ্ধ ও এ সম্পর্কিত বিতর্কের সাথে মিলিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।