এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিয়ের ছবি নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিতে বেগম জিয়ার পাশে যে কনেকে দেখা যাচ্ছে তিনি শেখ হাসিনা নন বরং বিএনপি নেত্রী রুখসানা খানম।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি এটি। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৫ জানুয়ারি 'Lx Nur Hossan' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে বলা হয়, "অসাধারণ একটি ছবি। শেখ হাসিনার বিয়ে অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের নয়। প্রধানমন্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পাশে বিয়ের সাজে থাকা কনে বিএনপি নেত্রী রুখসানা খানম মিতুয়া। এটি মিতুয়ার বিয়ের ছবি।
কি -ওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট Albd.org এ LIFE OF SHEKH HASINA নামের একটি বইতে (অনলাইন সংস্করণ) শেখ হাসিনার বিয়ের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। বইয়ের ২য় পাতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে লেখা হয়, "১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তার বিয়ে হয়"। ওই পাতায় বেশ কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে তার বিয়ের ছবিও দেখা যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত শেখ হাসিনার বিয়ের ছবি এবং আলোচ্য পোস্টের ছবি পর্যবেক্ষণ করে, ছবি দুটির কনে এক ব্যক্তি মনে হয়নি। পোশাক, চেহারা ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দুটি ছবির কনের মধ্যে বেশ অমিল দৃশ্যমান। ফেসবুকে আলোচ্য ছবি (বামে) এবং বই থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার বিয়ের ছবির (ডানে) মধ্যে পার্থক্য দেখুন--
এদিকে আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই 'Kiron Babu' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে করা এক পোস্টে আলোচ্য ছবির সাথে মিল রয়েছে এমন একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে 'Mitua Khan' নামের এক ব্যক্তিকে ট্যাগ করে তাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, "জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সোনালী অতীত, রণাঙ্গনের অতন্দ্র প্রহরী,শহীদ জিয়া'র আদর্শের সূর্য্য সৈনিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেত্রী। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য "রুখসানা খানম মিতুয়া" আপা। আজ Mitua আপার জন্মদিন "শুভ কামনায় শুভ জন্মদিন" আপা। শুভ হোক আগামীর পথচলা, শুভ হোক সবকিছু।" পোস্টের ক্যাপশন থেকে বোঝা যায়, ছবিতে দৃশ্যমান বেগম খালেদা জিয়ার পাশের ব্যক্তি বা কনেকে তিনি জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তা থেকে অনুমান করা যায়, কনে মিতুয়া খান। স্ক্রিনশট দেখুন--
উপরের পোস্টের সুত্র ধরে 'Mitua Khan' এর প্রোফাইলে সার্চ করে দেখা যায়, তিনি নিজের পরিচয় হিসেবে বিএনপির নেত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেত্রী রুখসানা খানম মিতুয়া বলে উল্লেখ করেছেন। তার ফেসবুক একাউন্টে ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়, যেখানে আলোচ্য ছবিটির সাথে মিল রয়েছে একই বিয়ের অনুষ্ঠানের একটু ভিন্ন মুহুর্তে নেয়া ছবি সহ খালেদা জিয়ার সাথে নিজের বেশ কয়েকটি ছবি যুক্ত করেছেন মিতুয়া। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও দেশে রঙিন ছবি তোলার প্রযুক্তি করে এসেছে এ বিষয়ে সার্চ করে "দেশে ১৯৭৯ সালে চালু হয় রঙিন ছবির স্টুডিও" শিরোনামে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিশ্বে প্রথম রঙিন ছবি তোলা হয় ১৮৯০ সালের দিকে। তবে বাংলাদেশে প্রথম রঙিন ছবি প্রিন্ট শুরু হয় ১৯৭৯ সালে"। এদিকে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় তার আগে অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে। ফলে আলোচ্য ছবিটি যেহেতু রঙিন ছবি, তাই এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের ছবি হওয়ার বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়।
অর্থাৎ, আলোচ্য ছবিতে বেগম খালেদা জিয়ার পাশে কনের সাজে থাকা নারী বিএনপি নেত্রী রুখসানা খানম মিতুয়া।
সুতরাং ফেসবুকে বিএনপি নেত্রী মিতুয়া'র বিয়ের ছবি পোস্ট করে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।