ছবির পরিবারটি বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাননি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটিতে দৃশ্যমান পরিবারটি ফেসবুকে পোস্ট করে তাদের ব্যাপারে ছড়ানো গুজবে কান না দিতে অনুরোধ করেছেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ এবং আইডিতে একটি পরিবারের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুইদিন আগে ৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৭ জানুয়ারি 'হৃদয়ং পার্থ প্রনতোষ' নামের ফেসবুক পেজ থেকে ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে বলা হয়, "এই পরিবারটি গতকাল বেনাপোল এক্সপ্রেসের ট্রেন দূর্ঘটনায় পুড়ে মারা গিয়েছিলো.. “ওঁ দিব্যান্ লোকান্ সাঃ গচ্ছতুঃ” বিদেহীদের আত্মার শান্তি কামনা করি।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবিতে দৃশ্যমান পরিবারের পক্ষ থেকে ফেসবুকে পোস্ট করে তারা ভাল আছেন এবং আলোচ্য দাবিটি গুজব বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভাইরাল ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'Chonchol Barmon' নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ অক্টোবর, ২০২৩ সালের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের প্রথম ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "রূপম বাবুর বছরের প্রথম পূজায় ঘুরাঘুরি।" স্ক্রিনশট দেখুন--
কি ওয়ার্ড সার্চ করে, স্বপরিবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবরটি সত্য নয় এবং এটি গুজব বলে ওই ফেসবুক আইডি থেকে ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে তিনি জানান, "আমার এই ছবি নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে কেউ ভুয়া নিউজ ছড়াছে.... দয়া করে কেউ বিশ্বাস করবেন না।" পোস্টটি দেখুন--
এছাড়াও, ওই আইডি থেকে ৭ জানুয়ারি একই বিষয় নিয়ে আরও একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, "ঈশ্বরের কৃপায় ভালো আছি, গুজবে কেউ কান দিবেন না।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "বেনাপোল এক্সপ্রেসে নিহত ৪ জন সম্পর্কে যা জানা গেল" শিরোনামে ডেইলি স্টার অনলাইনে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "ওই ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে কোনো শিশু নেই। নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ ও অন্য তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী। ময়নাতদন্তের পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন।" অর্থাৎ, প্রতিবেদনটিতে ভাইরাল হওয়া পরিবারের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের ছবিতে দৃশ্যমান পরিবারটি বেনাপোল এক্সপ্রেসে লাগা আগুনে পুড়ে মারা যাননি বা দগ্ধ হননি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি (শুক্রবার) রাত ৯টা ৫ মিনিটে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে চারজন নিহত হয়। আগুনে বেশ কয়েকজন দগ্ধ হয়। তবে কিভাবে আগুন লেগেছে সে ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভিন্ন একটি পরিবারের ছবি পোস্ট করে, পরিবারটি বেনাপোল এক্সপ্রেসে গত ৫ জানুয়ারি লাগা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।