বরের নাচ দেখে কনের বাবার বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘটনাটি বাস্তব নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য ঘটনাটি বাস্তব নয় বরং বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্টকে বাস্তব ঘটনা হিসেবে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের পেজ সহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টে-পেজে একটি খবরের ফটোকার্ড-লিংক পোস্ট করা হচ্ছে। খবরটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরের নাচ দেখে বিয়ে ভেঙে দিলেন কনের বাবা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ০২ ফেব্রুয়ারি ‘দৈনিক কালের কন্ঠ’ এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে এই খবরের একটি ফটোকার্ড পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, “বরের নাচ দেখে বিয়ে ভেঙে দিলেন কনের বাবা”। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, কালের কণ্ঠ, দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক জনকণ্ঠ, মানবকণ্ঠ, ডেইলি ক্যাম্পাস, নয়া শতাব্দী, বাংলাদেশ মোমেন্টস, নিরাপদ নিউজ, বিডি২৪লাইভ, জুম বাংলা, গ্রামের কাগজ সহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য প্রতিবেদনের ঘটনাটি কোনো বাস্তব ঘটনার নয়। বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্টকে বাস্তব ঘটনা হিসেবে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম 'দ্য পাইওনিয়ার' এর ই-পেপারের গত ৩০ জানুয়ারির পত্রিকার অ্যামাজনের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপনের ভিন্নধর্মী স্ক্রিপ্ট হিসেবে গল্পটি প্রচার করা হয়েছিল। সেই গল্পটিই পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম বাস্তব হিসেবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় খবরটি তারা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'এনডিটিভি' এর বরাতে প্রকাশ করেছে। পরবর্তীতে এনডিটিভি এর অনলাইন সংস্করণে খবরটি এবং এর উপলব্ধ আর্কাইভ সংস্করণটি পাওয়া যায়। যদিও প্রকাশের পর খবরটির কোনো অংশে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
"Viral Ad? Report Claims Groom's Choli Ke Peeche Dance Ended His Wedding" শিরোনামের এনডিটিভি'র আর্কাইভ সংস্করণের প্রতিবেদনে উল্লেখ দেখা যায়; হুবহু এজাতীয় ঘটনা সম্বলিত একটি ভাইরাল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছিল এবং সমজাতীয় একটি বাস্তব ঘটনাও রয়েছে। তবে এনডিটিভিও ঘটনার দিন-তারিখ কিংবা স্পষ্ট করে স্থানও উল্লেখ করা হয়নি। এনডিটিভি-ও খবরটি আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম 'নবভারত টাইমস' থেকে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।
সার্চ করে 'নবভারত টাইমস' এর খবরটি এবং এর উপলব্ধ আর্কাইভ সংস্করণটিও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেও প্রকাশের পর খবরটির কোনো অংশে কোনো পরিবর্তন আনা হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে প্রাপ্ত আর্কাইভ সংস্করণ থেকে দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা একটি পত্রিকার কাটিং এর উপর ভিত্তি করে খবরটি প্রচার করা হয়েছে। 'নবভারত টাইমস' এর প্রতিবেদনটির পিডিএফ সংস্করণ দেখুন--
এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মের পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি এমন বিজ্ঞাপন আগে দেখেননি। এক্স প্ল্যাটফর্মের পোস্টটির প্রিভিউ দেখুন--
পরবর্তীতে সার্চ করে দেখা যায়, পত্রিকার কাটিং ছবিটি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম 'দ্য পাইওনিয়ার' এর ই-পেপারের গত ৩০ জানুয়ারির পত্রিকার অংশ। মূল পত্রিকার ছবিটি দেখুন--
আলোচ্য অংশের লেখাটির সাথে অ্যামাজনের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এমনকি আলোচ্য অংশের লেখাটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পাশাপাশি থাকা পত্রিকাটির অন্যান্য সংবাদের মতো এই সংবাদটিতে প্রতিবেদকের নাম কিংবা পদবী উল্লেখ করা হয়নি। পত্রিকাটির অন্যান্য সংবাদের ফন্ট ও উপস্থাপনার ভঙ্গিমাতেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান 'বুম লাইভ' এর পক্ষ থেকে 'দ্য পাইওনিয়ার' এর বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় বিভাগের প্রধান বরুণ কুমার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হয়। চৌধুরী নিশ্চিত করে বুমকে বলেন, "এটি কোনও আসল খবর নয়, বরং এক বিজ্ঞাপন। অ্যামাজনের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এমএক্স প্লেয়ারের বিজ্ঞাপনের অংশ হিসেবে তা প্রকাশ করা হয়েছিল।"
তিনি আসল প্রতিবেদনের সাথে ওই অংশের তফাৎ বোঝাতে প্রচারমূলক অংশ উল্লেখ করার যে প্রয়োজন ছিল, সেকথাও স্বীকার করে নেন।
অর্থাৎ আলোচ্য প্রতিবেদনের ঘটনাটি বাস্তব নয় বরং বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে “বরের নাচ দেখে বিয়ে ভেঙে দিলেন কনের বাবা” মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে; তা বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট মাত্র।