নেলসন ম্যান্ডেলাকে কারারক্ষীর অত্যাচারের গল্পটি বানোয়াট
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে ফেসবুকে প্রচারিত কারারক্ষীর অত্যাচারের গল্পটির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, দক্ষিন আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা যখন কারাগারে ছিলেন, এক কারারক্ষী তার উপরে অত্যাচার করতো। পরবর্তীতে নেলসন ম্যান্ডেলা যখন প্রেসিডেন্ট হন, সেই কারারক্ষীর সাথে তার দেখা হয় এবং কারারক্ষী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তাকে দেখে নেলসন ম্যান্ডেলা প্রতিশোধপরায়ণ না হয়ে বরং আপ্যায়ন করেন। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২৭ জুলাই "Shefayet Ullah Repon" নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে লেখা হয়, "নেলসন মেনডেলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে একদিন ঘুরতে বের হলেন। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে একটি হোটেলে খেতে বসলেন। পুরো হোটেল এক কোনায় একজন লোক বসে ছিলো। সেই লোকটি প্রেসিডেন্ট নেলসন মেনডেলাকে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলো। প্রেসিডেন্টে কাছে এগিয়ে গেলেন। থাকে খুব আদর যত্ন করে খাওয়ালেন। লোকটি ভয় কাচুমাচু ছিল। প্রেসিডেন্টের সাথে থাকা সঙ্গী সাথীরা জিজ্ঞেসা করলেন স্যার উনি এমন ভয় পাচ্ছে কেন? প্রেসিডেন্ট বললেন আমি যখন দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি অবস্থায় ছিলাম তখন এই লোকটি আমার পিপাসা পেলে তার প্রসাব খেতে দিতেন। ক্ষুধার সময় পচা দুর্গন্ধ যুক্ত খাবার খেতে দিতেন। তবে আজকে আমি প্রেসিডেন্ট দেশের সকল নাগরিক আমার সন্তানের মত তাই এই লোকটিও আমার আপনজন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ফেসবুক পোস্টে প্রচারিত কারারক্ষীর নেলসন ম্যান্ডেলাকে অত্যাচারের গল্পটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গণমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে "Nelson Mandela: A fellow Robben Island prisoner's memories" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে নেলসন ম্যান্ডেলার একজন সহকর্মী এবং কারাসঙ্গী ডক্টর ইশপের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কারাগারে ম্যান্ডেলাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে দেখা হতো। সম্মানের সাথে আচরণ করা কোনো ব্যক্তির সাথে পোস্টে দাবি করা ঘটনাটি ঘটা স্বাভাবিক নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, একই দাবি আফ্রিকায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা আফ্রিকা চেক যাচাই করে দাবিটি ভিত্তিহীন বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। "Did Mandela invite the prison guard who used to urinate on his head to lunch? Facebook anecdote false" শিরোনামে প্রকাশিত ওই ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে নেলসন ম্যান্ডেলাকে কারাগারে অত্যাচারের দাবিকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দেয়া হয। ম্যান্ডেলার ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে কাজ করা নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশনের আর্কাইভ ও গবেষণা পরিচালক রাজিয়া সালেহ'র বরাত দিয়ে আফ্রিকা চেক জানায়, মাদিবা (নেলসন ম্যান্ডেলা) নিজেই সবসময় বলতেন যে তাকে কারাগারে কখনোই অত্যাচার করা হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
তবে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে কারাগারে অত্যাচারের ঘটনা না ঘটার ব্যাপারে জানা গেলেও, আলোচ্য পোস্টে বর্ণিত কাহিনীর উৎস আলাদাভাবে খুঁজে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
অর্থাৎ রোবেন দ্বীপে দীর্ঘ কারাবাসের সময় নেলসন ম্যান্ডেলাকে শারীরিক অত্যাচার কিংবা পিপাসা পেলে তাঁকে কারারক্ষীর প্রস্রাব খেতে দেয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সুতরাং নেলসন ম্যান্ডেলাকে কারাগারে কারারক্ষীর অত্যাচারের ভুয়া দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।