নদী একটিই, পানির গভীরতার তারতম্যের ফলে রং ভিন্ন দেখাচ্ছে
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, লালাখালের এই নদীটির পানি স্বচ্ছ হওয়ায় গভীর অংশের পানি নীল ও অগভীর অংশে নিচের বালু মাটি দেখা যায়।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও গ্রুপে একটি ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ছবিটিতে সিলেটের লালাখালে অবস্থিত দুটি নদী দেখা যাচ্ছে। দুটি নদীর পানি দু'রকম যা কখনো একসাথে মিশে না। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৪ এপ্রিল 'বিশ্ব ও মহাকাশ' নামে একটি পাবলিক গ্রুপে 'MD Mømìñ Möllå' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "সিলেটের লালাখালে দুই নদীর পানি একসাথে কখনোই মিশে না।" । পোস্টের ছবিতে একটি জলাধারে পাশাপাশি দুই রংয়ের পানি দেখা যাচ্ছে। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ছবিতে দৃশ্যমান জায়গাটি সিলেটের সারি নদীর লালাখাল জিরো পয়েন্ট (ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত) হিসেবে পরিচিত। স্বচ্ছ পানির জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই নদীটি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পানি স্বচ্ছ হওয়ায় গভীর অংশের পানি নীল দেখায় আর অগভীর অংশে নদীর তলদেশের বালু মাটি দেখা যায় অর্থাৎ তামাটে দেখায়।
আলোচ্য ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ফটোস্টকার এলামিতে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল পোস্ট করা একটি ছবি পাওয়া যায়, ছবিটি হুবহু এক না হলেও ভিন্ন দিক থেকে তোলা একই স্থানের ছবি। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, সিলেটের লালাখানের জিরো পয়েন্ট থেকে আলোচ্য ছবিটি তোলা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
সিলেটের লালাখাল নামক স্থানে অবস্থিত নদীর ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে জানা যায়, সিলেটের লালাখাল স্বচ্ছ ও নীল পানির জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। ভারতের জৈন্তিয়া হিলস্ থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করে লালাখাল দিয়ে বয়ে গেছে সারি নদী। একইভাবে সার্চ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ট্রাভেলফিড ডট কম নামে একটি ব্লগসাইটে "Unearthly Beauty of My Birthplace. Part-1 (Lalakhal Tour)" শিরোনামে লেখা একটি নিবন্ধে আলোচ্য ছবিটি যে স্থানে তোলা, একই স্থানের আরেকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আলোচ্য ছবিটির স্থান সিলেটের লালাখালে একাধিক নদী আছে কিনা এবং পানির রংয়ের পার্থক্যের কারণ জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'DH Travelling Info' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে "Lalakhal Sylhet | বাংলার নীলনদ লালাখাল সিলেট | জাফলং - লালাখাল একদিনের সিলেট ভ্রমণ তথ্য" শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ৬ মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে ৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে সিলেটের লালাখাল জিরো পয়েন্টের (আলোচ্য ছবিটি যে স্থানের) ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, নদীতে নৌকা চলাচলের মত গভীর অংশের পানির রং নীল দেখাচ্ছে আর অগভীর অংশে নদীর তলদেশের বালু মাটি দেখা যাচ্ছে যা তামাটে বর্ণের। নদীর গভীরতা কম হওয়া এবং পানির স্বচ্ছতার ফলে বছরের নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত নদীটিতে এরকম দৃশ্য দেখা যায় বলেও জানান ভিডিও নির্মাতা। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
আরো সার্চ করে 'Kanchon Shokal' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর "পুর লালাখাল টা ঘুরিয়ে দেখাবো" শিরোনামে আপলোড করা আরেকটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটিতেও লালাখালের জিরো পয়েন্টে গিয়ে ভিডিওর নির্মাতাকে ভিডিও করতে দেখা যায়। এসময় নির্মাতাকে বলতে শোনা যায়, বর্ষার মৌসুম না হওয়ায় পানি কম থাকায় জিরো পয়েন্ট পেরিয়ে সামনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ওই ভিডিওটিতেও গভীরতাসম্পন্ন পানির স্থানে পানির রং নীল এবং অগভীর স্থানের পানি তামাটে দেখা যাচ্ছে। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও Mr Traveller নামে আরেকটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে "Lalakhal Zero Point ! Family Tour Sylhet ! Lalakhal Sylhet Jaintapur ! লালাখাল জিরো পয়েন্ট সিলেট" শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ছবিটিতে সিলেটের লালাখাল দিয়ে বয়ে চলা অবস্থিত দুটি পৃথক নদী দেখানো হয়নি বরং সেখানে একটিই নদী আছে, ভারত থেকে প্রবেশ করা স্বচ্ছ পানির এই নদীর নাম সারি নদী। আর পানি না মেশার দাবিটিও বিভ্রান্তিকর, বরং স্বচ্ছ পানির কারণে নদীতে বয়ে চলা একই পানি গভীর অংশে নীল দেখাচ্ছে আর অগভীর অংশে নদীর তলদেশের বালু মাটি দেখা যাচ্ছে। গভীরতার তারতম্যের ফলে দুই রংয়ের পানি মনে হচ্ছে।
সুতরাং সিলেটের লালাখালে দুটি নদী রয়েছে এবং দুটি নদীর পানি একসাথে মেশে না বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা সঠিক নয়।