কাবার উপর দিয়ে বিমান না চলার কারণ হিসেবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষার লক্ষ্যে কাবা শরীফের উপর দিয়ে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব সরকার।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে মুসলিমদের পবিত্র স্থান কাবা শরীফ নিয়ে বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন শেয়ার করা হচ্ছে, যেখানে দাবি করা হয়, পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থান করার কারণে কাবা শরীফের উপর দিয়ে কোনো আকাশযান বা পাখি উড়ে যেতে পারে না। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
গত ১৪ই মার্চ 'GMRR' নামের একটি পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, 'যে কারণে কোন পাখি বা কোন বিমান উড়ে যেতে পারেনি কাবা শরীফের উপর দিয়ে'। ওই ভিডিওতে এরকম দাবি করা হয়েছে যে, গোটা পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় খানায়ে কাবা শরীফের উপর দিয়ে কোনো বিমান উড়ে যেতে পারে না। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পবিত্র কাবা শরীফের উপরে বিমান চলাচল করতে না পারার কারণ ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নয় বরং ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যেই মক্কা শহরের উপর দিয়ে আকাশযান চলাচল নিষিদ্ধ করে সৌদি আরব সরকার। এজন্য মক্কা শহরে কোনো বিমানবন্দরও স্থাপন করা হয়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায়, গবেষণাধর্মী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মিডিয়া প্লাটফর্ম 'roarmedia' তাদের ওয়েবসাইটে 'পৃথিবীর বিখ্যাত কয়েকটি 'নো ফ্লাই জোন'' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে যেখানে কাবাশরীফের নাম উঠে এসেছে। রোর মিডিয়া ওই নিবন্ধে লিখেছে, "হজের মৌসুমে এবং অন্যান্য সময়ে নিরাপত্তার জন্য মক্কার আকাশে হেলিকপ্টারগুলোকে স্বচ্ছন্দ্যেই উড়তে দেখা যায়। তবে মূল কথা হলো, মক্কায় বিমান ওঠা-নামা করার জন্য কোনো বিমানবন্দর নেই। যদিও সেখানে প্রতি বছর শতকোটি মুসল্লি জমায়েত হয়, তবুও কাবার সার্বিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় রেখে সেখানে কোনো বিমানবন্দর তৈরি করা হয়নি। যেহেতু মক্কায় কোনো বিমানবন্দর নেই, তাই মক্কার আকাশে বিমান উড়তে দেখা যাবে, এমন আশা করাও উচিত নয়।" স্ক্রিনশট দেখুন--
'INSTITUT DE PHYSIQUE DU GLOBE DE PARIS (IPGC)' বা 'PARIS GLOBE INSTITUTE OF PHYSICS' নামের একটি ওয়েবসাইটে 'Dynamics of geological fluids' শিরোনামের একটি নিবন্ধে কয়েকজন ভূবিজ্ঞানী একটি গ্রূপ প্রেজেন্টেশানে উল্লেখ করেছেন যে, পৃথিবীর ভূকেন্দ্রে পৃথিবীর একটা শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। ভিডিওটির ৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডে দেখা যায়, একজন বিজ্ঞানী একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ডের উল্লেখ করেছেন যেটি মূলত পরিচালিত হয় পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা তরল স্তর থেকে এবং এখান থেকে চৌম্বক শক্তি ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে। ফ্রান্সের Geomagnetism এর পর্যবেক্ষক, জাতীয় ভূতত্ত্ব পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভূবিজ্ঞানী 'Vincent Lesur' একটি নিবন্ধেও একই বক্তব্য লিখেছেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র পৃথিবীপৃষ্ঠে নয় বরং পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।
আরো সার্চ করে পাওয়া যায়, ইন্দোনেশিয়ার সংবাদমাধ্যম 'voi English' তাদের ওয়েবসাইটে 'The Center Of The Earth And The Attraction Of Magnets Are The Reasons For Planes Can't Pass Over The Kaaba, Really?' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন সৌদি আরবীয় পাইলট ও পর্যবেক্ষক হাসান আল গামিদি এক সাক্ষাৎকারে কাবার উপর দিয়ে বিমান চলাচল না করার কারণ হিসেবে বলেছেন, মুলত কাবা শরীফের আশেপাশের এলাকাগুলো পাহাড়পর্বতে ঘেরা। তাই, আকাশযানের ইঞ্জিনের শব্দে মসজিদটিতে প্রার্থনারতদের মনোযোগ নষ্ট হতে পারে বা এর বিকট শব্দে কোন হৃদরোগীর শারীরিক অবনতি ঘটতে পারে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এর আগে ২০২১ সালের কাবা শরীফকে কেন্দ্র করে আরেকটি দাবি ভাইরাল হয় যে, কাবাশরীফে ভৌগোলিক অবস্থানে শক্তিশালী চৌম্বকীয় উপস্থিতির কারণে এই মসজিদটির উপর দিয়ে বিমান উড়ে যেতে পারে না। এই দাবিকে তখন ভুল প্রমাণ করে ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, এএফপি।
অর্থ্যাৎ মূলত ধর্মীয় পবিত্রতা রক্ষা ও তীর্থযাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যেই কাবা শরীফের উপর দিয়ে আকাশযান চলাচল নিষিদ্ধ করে সৌদি আরব সরকার। এর সাথে পৃথিবীর কেন্দ্র বা ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত কোন বিষয়ের সম্পর্ক নেই।
সুতরাং কাবা শরীফ পৃথিবীর কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় এর উপর দিয়ে বিমান উড়ে যেতে পারে না দাবিটি সঠিক নয় বরং বিভ্রান্তিকর।