মাথার খুলির মত দেখতে গাছের ছবিটি যাক্কুম গাছের নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, মাথার খুলির মত দেখতে গাছটির নাম স্ন্যাপড্রাগন আর যাক্কুম গাছ ভিন্ন জাতীয় একটি উদ্ভিদ।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি গাছের ছবি শেয়ার করে গাছটি যাক্কুম গাছ বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৬ জুন 'দোয়া কবুলের অলৌকিক গল্প 🤲' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Tamanna Jahan Lamiya' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি গাছের ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "যাক্কুম গাছ। দেখতে মারাত্মক ভয়াবহ ও বীভৎস! এই গাছ রয়েছে সৌদি আরবের তায়েফ অঞ্চলে। মক্কা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে তাইফ শহর। শহরটি চারদিকে শীতল পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। এখন এই অঞ্চলে যাক্কুম গাছও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এটি প্রচুর বড় বড় তীক্ষ্ণ কাঁটযুক্ত একটি গাছ। পবিত্র কুরআনে সুরা আল-ওয়াকিয়াহ এর ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, এই গাছের ফল হবে জাহান্নাম বাসীদের জন্য খাদ্য স্বরূপ। "লায়া'কিলুনা মিন সাজারীম মিন যাক্কুম' অর্থাৎ-"তোমরা অবশ্যই যাক্কুম গাছ থেকে খাবে" তাফসীরে এসেছে, এই খাবার পচে গলে যাওয়া অতিশয় দূর্রগন্ধযুক্ত খাবার, গলিত পিতলের মতো স্বাদ আসবে, বরং আরও খারাপ। ফলগুলি তাদের শরীরে ও মুখে জ্বলন্ত অঙ্গার স্বরূপ হবে। যাক্কুম শব্দটি পবিত্র কুরআনে- * সূরা আশ-শাফায়াত এর ৬২, ৬৩, ৬৬ ও ৬৭, ৬৮ নং আয়াতে, * সূরা আল-ইসরা এর ৬০ নং আয়াতে, * সূরা আদ-দুখান এর ৪৩ নং আয়াতে * এবং সূরা আল-ওয়াকিয়াহ এর ৫২ নং আয়াতে সহ মোট ৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে। এই খাবার মূলত জেনাকারী বা ব্যভিচারী স্ত্রী-পুরুষদের খাওয়ানো হবে। - আল্লাহপাক আমাদের সকলকে জেনা ব্যভিচার থেকে হেফাজত করুন- আমীন।"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পোস্টটিতে যুক্ত ছবিটি দেখুন আলাদাভাবে--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। যাক্কুম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Euphorbia যেটি Euphorbiaceae পরিবারের সদস্য। অন্যদিকে, আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ছবিটি স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজের। স্ন্যাপড্রাগনের বৈজ্ঞানিক নাম হল Antirrhinum majus যেটি Plantaginaceae পরিবারের সদস্য।
আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ছবিটির সম্পর্কে জানতে ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে অনলাইন ফটোস্টকার ওয়েবসাইট ন্যাচার ইন স্টক ডট কমে "Snapdragon (Antirrhinum sp.) seedpod in close up, Twente, Overijssel, The Netherlands" শিরোনামে আপলোডকৃত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচ্য ছবির সাথে উক্ত ছবিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। ছবিটির ব্যাপারে বলা হয়, এটি একটি স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজ। স্ন্যাপড্রাগন গাছের ল্যাটিন নাম Antirrhinum sp বলে উল্লেখ করা হয়। ওই একই ওয়েবসাইটে স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজের আরো ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গার্ডেনিং নো হাউ এবং ডার্কডুয়েলিং নামের দুটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুটি নিবন্ধে প্রাপ্ত ছবির সাথেও আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল শুকিয়ে বীজ হওয়ার পরে সেই বীজগুলোকে দেখতে মানুষের মাথার খুলির মত দেখা যায়।
এছাড়া কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা ডট কমে "snapdragon" শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, Plantaginaceae পরিবারের সদস্য স্ন্যাপড্রাগনের বৈজ্ঞানিক নাম Antirrhinum majus. স্ক্রিনশট দেখুন--
অন্যদিকে যাক্কুম গাছের ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দা মুনসিফ ডেইলি নামে একটি ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর "Quranic Zaqqum – A Scientific Study" শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। নিবন্ধটিতে বলা হয়, যাক্কুম বলে পরিচিত গাছটিকে আরবিতে রিজলাত ইবলিস বলে ডাকা হয় এবং ইংরেজি ও ল্যাটিন ভাষায় ইউফোরবিয়া নামে পরিচিত। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Euphorbia resinifera Berg. (পরিবার- Euphorbiaceae). স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া রেডিয়ান্সউইকলি ডটকম নামে আরেকটি ওয়েবসাইট থেকেও যাক্কুম বলে পরিচিত গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ইউফোরবিয়া বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে ইউফোরবিয়া শ্রেণীর গাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'animals.sandiegozoo.org' নামের একটি ওয়েবসাইটে "Euphorbias" শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ইউফোরবিয়া জাতের গাছের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিতে দেখা যায়, ইউফোরবিয়া গাছ সাকুলেন্ট, অর্থা জলীয় পদার্থযুক্ত পাতাবিশিষ্ট এবং কাঁটাযুক্ত শরীরবিশিষ্ট। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে অনলাইন ফটোস্টকার ওয়েবসাইট গেটি ইমেজেস এবং শাটারস্টকেও ইউফোরবিয়া শ্রেণীর গাছের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ছবিতেও ইউফোরবিয়া গাছকে কাঁটাদার ও মোটা পাতাবিশিষ্ট হতে দেখা যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ছবিটি যাক্কুম গাছের নয়। স্ন্যাপড্রাগন নামে একধরণের গাছের বীজের ছবিকে যাক্কুম গাছের ছবি বলে দাবি করা হচ্ছে।
সুতরাং ভিন্ন প্রজাতির একটি গাছের ছবিকে যাক্কুম গাছের ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।