রুটি হাতে কাঁদতে থাকা বৃদ্ধের ছবিটি পুরোনো
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটি তুরস্কের সাম্প্রতিক ভুমিকম্পের নয় বরং ১৯৯৯ সালে তুরস্কে ঘটা ভূমিকম্পের পরে এটি ধারণ করা হয়।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে রুটি হাতে কাঁদতে থাকা এক বৃদ্ধের একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ছবিটি তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পের পরে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যক্তির। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি 'Rafiq Uddin Mohammed' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করে বলা হয়, 'রিজেকের মালিক আল্লাহ। সিরিয়ার এই বৃদ্ধ যৌবন কালে বৃদ্ধাকালীন রিজেকের ব্যবস্থা করেছিলেন। করেছিলেন তিনটি বাড়ি। গত ভুমিকম্পে তার তিনটি বাড়িই ধংস স্তুপে পরিনত হয়েছে। রাজাকীয় ভাবে খাওয়া দাওয়া শেষে বিলাশ বহুল বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ঘুমের মধ্যেই সব ধংস স্তুপে পরিনত হয়েছে। ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া বৃদ্ধ রিলিফের রুটি হাতে নিয়ে কাদছেন। ১৭ সেকেন্ড ভুমিকম্পের আগে লোকটি ছিল ৩ টি বাড়ির মালিক। আর ১৭ সেকেন্ড পরে সেই লোকটি ৩ টি রুটির ও মালিক না, অন্যের দেওয়া রুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। মহান আল্লাহ চাইলে ১ সেকেন্ডে সব কিছুই পরিবর্তন করে দিতে পারেন। হে আল্লাহ, তুরস্কের সবাইকে নিরাপদে রাখুন।' ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ পোস্টটিতে দাবি করা হচ্ছে, ছবিটি চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়া ও তুরস্কে ঘটা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়ার এক বৃদ্ধের।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ছবিটি সাম্প্রতিক নয় বরং ১৯৯৯ সালে তুরস্কে ঘটা একটি ভূমিকম্পের পরে এটি ধারণ করা হয়।
ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে তুরস্ক ভিত্তিক একটি পত্রিকা hurriyetdailynews-এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর 'Düzce quake victims commemorated 21 years on' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "১৯৯৯ সালে ঘটা তুরস্কের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প '1999 Düzce earthquake' এ হতাহতদের ১২ নভেম্বর স্মরণ করা হয়। একই মাত্রার একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়ের বিষয়ে উদ্বেগ এখনো রয়ে গেছে"(অনূদিত) স্ক্রিনশট দেখুন--
আরও সার্চ করে তুরস্ক ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল 'A HABER' এর অনলাইন ভার্সনে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি 'Different earthquake, same pain! Basri Kara and 'grandpa bread'….' শিরোনামে একটি প্রতিবেদনেও আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, '"গত শুক্রবার এলাজিগে হওয়া ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের যন্ত্রণা অব্যাহত থাকলেও ভূমিকম্প এলাকায় তোলা একটি ছবি সামনে এসেছে। বসরি কারার যন্ত্রণার বর্ণনার ছবি যখন চিহ্ন রেখে গিয়েছিল, তখন ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে তোলা 'রুটি হাতে বৃদ্ধ'র ছবিও মাথায় আসে। সাংবাদিক ভলকান কাশিক এবং ফটোগ্রাফার আব্দুর রহমান আন্তাকিয়ালী, যিনি এসব ঐতিহাসিক ছবি ধারণ করেছিলেন, ছবিগুলোর পিছনের গল্প উক্ত চ্যানেলকে বলছিলেন.."। (অনূদিত) স্ক্রিনশট দেখুন--
ওই প্রতিবেদনটি থেকে আলোচ্য ছবিটির ধারণকারীর নাম আব্দুররহমান আন্তাকিয়ালী জানতে পেরে সার্চ করে ইন্সটাগ্রামে তার একাউন্টটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই একাউন্টে আলোচ্য ছবিটিও খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর করা পোস্টে ওই ছবিটির সম্পর্কে তিনি বলেন, ''আমি Düzce / Kaynaşlı-তে এই ছবিটি তোলার ১৫ বছর হয়ে গেছে... শ্যুট করা ছবি আঙ্কারায় পাঠানোর তাড়ার কারণে তার নামও পাইনি। প্রিন্ট সংস্করণ?" তিনি ডাকলে আমি তার নাম জানতে পেরেছিলাম।'' (অনূদিত) ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক এবং সিরিয়ায় সংঘটিত ভূমিকম্পের পরে ১৯৯৯ সালে তোলা এই ছবিটি ফেসবুকে সাম্প্রতিক দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং প্রায় ২৪ বছর আগে ঘটা তুরস্কের একটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এক বৃদ্ধের ছবিকে সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়ায় ঘটা ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।