ছবিটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সংরক্ষিত মহানবী (স.) এর জোব্বার নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটি ইস্তাম্বুলে সংরক্ষিত মহানবী (স.) এর ব্যবহৃত পোশাকের নয় বরং ইতালির তুরিন জাদুঘরে রাখা একটি পোশাকের।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে এটি ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পোশাকের, যেটি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সংরক্ষিত আছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১ মে 'Nijhum Fashion' নামের ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা'য়ালার প্রিয় বন্ধু.. নবীকূলের শিরোমনি হযরত মুহাম্মদ( সাঃ) এর পরিধেয় "জোব্বা মোবারক"১৪০০ বছর যাবৎ তুরস্কে সংরক্ষিত.. পবিত্র রমজান মাসে প্রদর্শন করা হয়.."। ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ছবিটি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সংরক্ষিত ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জোব্বার নয় বরং এটি ইতালির তুরিন শহরের 'Museo Egizio' বা মিশরীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত একটি পোশাকের ছবি।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ব্লগসাইট 'fabriholic blog'-এ লেখা একটি প্রতিবেদনে উক্ত ছবিটি পাওয়া গেছে যেখানে লেখক বলেছেন, তিনি ইতালির তুরিন শহরের একটি জাদুঘরে গিয়ে এই পোশাকটি খুঁজে পান। ব্লগসাইটে যুক্ত করা ছবিটি দেখুন--
কি ওয়ার্র্ড সার্চ করে দেখা যায়, ব্রিটিশ স্টক ফটোগ্রাফি এজেন্সি Alamy তাদের ওয়েবসাইটে 'Italy Piedmont Turin Egyptian Museum new staging - Second Floor -tunic dress pleated in linen Gebelein (2435 - 2118 BC)' শিরোনামে একটি ছবি সংযুক্ত করেছে। ছবিটি দেখুন---
অর্থ্যাৎ, ছবির পোশাকটি মিশরীয় সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত প্রায় আড়াই হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দের আশেপাশে তৈরি ও ব্যবহৃত হয়। ফলে, প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগের একটি মিশরীয় পোশাকের সাথে সপ্তম শতকের হযরত মোহাম্মদের (স) কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া, ভ্রমণভিত্তিক লেখা প্রকাশ করে এমন একটি ওয়েবসাইট 'LiveJournal' তাদের সাইটে 'Египетский музей в Турине (Museo Egizio)' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে, যার স্বয়ংক্রিয় গুগল অনুবাদ 'Egyptian Museum in Turin (Museo Egizio)'। ওই প্রতিবেদনে তুরিন শহরের মিশরীয় জাদুঘরে থাকা বিভিন্ন প্রাচীন অনুষঙ্গের ছবির ভিতরেও আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটি দেখুন---
Wikimedia Commons-এ এই একই পোশাকের ছবি খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে। ছবিগুলো দেখুন--
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে দেখা যায়, Museo Egizio-র প্রায় তিন হাজার সংগ্রহের মধ্যে আলোচ্য ছবির পোশাকটি S-14087 নাম্বার সংযোজন হিসেবে সেখানে সংরক্ষিত রয়েছে। দেখুন পোশাকের ছবিটির স্ক্রিনশট---
সুতরাং আলোচ্য ছবির পোশাকটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সংরক্ষিত মহানবী (স.) এর নয় বরং এটি ইতালির তুরিন শহরের মিশরীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত একটি পোশাকের ছবি।
এদিকে, নিউজ পোর্টাল 'Dhakapost'-এ প্রকাশিত 'মুহাম্মদ (সা.) এর পোশাক দেখতে ইস্তাম্বুলে হাজারো মানুষের ঢল' শিরোনামের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের হিরকা-ই শেরিফ মসজিদে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর একটি পোশাক সংরক্ষিত আছে। প্রতিবেদনে যুক্ত করা ইউটিউব ভিডিওটিতে মহানবী (স.) এর পোশাকের ভিডিওচিত্রও দেখা যায়। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
এবারে ইতালির তুরিন শহরের মিশরীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত একটি পোশাকের ছবি এবং ভিডিওচিত্র থেকে প্রাপ্ত তুরস্কের ইস্তাম্বুলের হিরকা-ই শেরিফ মসজিদে সংরক্ষিত মুহাম্মদ (স.) এর পোশাকের ছবির পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
অর্থ্যাৎ ছবিটি থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে, এই দুটি ছবির পোশাক এক নয়।
সুতরাং ইতালির তুরিন জাদুঘরে সংরক্ষিত পোশাকের ছবিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের হিরকা-ই শেরিফ মসজিদে সংরক্ষিত হযরত মুহাম্মদ (স.) এর পোশাক বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।
নোটঃ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সামান্য সংশোধিত।