নির্মাণাধীন ভবনের এই ছবিটি এডিটেড
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে নির্মাণাধীন একটি অবৈধ ভবনের ছবিকে এডিট করে আলোচ্য ছবিটি বানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ, আইডি ও গ্রুপ থেকে একটি নয়তলা বিশিষ্ট একটি নির্মাণাধীন বাঁকা ভবনের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন শুকিয়ে গেলে ভবনটি সোজা হয়ে যাবে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২০ আগস্ট 'Nigeria Updates' নামক পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, "Engineer said building will straight when it dry"। নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য ছবিটি এডিটেড। মূলত সাততলা একটি ভবনের ছবি এডিটের মাধ্যমে বাঁকা করে নয়তলা ভবনের ছবিটি বানানো হয়েছে। ভবনটি কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত ছিল। অনুমোদন না থাকায় ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ্য করে সরকারি নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চে "Unsafe Kayole building demolished after uproar" শিরোনামে কেনিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম the star এ ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটির ভবনের মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "সরকারি অনুমোদন ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করায় তার নিরাপত্তা নিয়ে কেনিয়ানদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে সরকার ‘ভবনটি ধসে পড়ার ঝুঁকি’ রয়েছে উল্লেখ করে সেটি অনিরাপদ ঘোষণা করে ভেঙে দেয়। অনুমোদন ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করায় বিল্ডিংয়ের মালিক ক্যারোলিন ওয়ানজিরুকে গ্রেফতরা করা হয়।" নিচে স্ক্রিনশর্ট দেখুন--
একই সার্চে "Nairobi County orders for demolition of shaky Kayole building after public outrage" শিরোনামে কেনিয়ার আরেকটি গণমাধ্যম Tuko সংবাদপত্রে একই সময়ের আরও একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে দাবি করা হয়, নাইরোবির কাউন্টি সরকার নির্দেশ দিয়েছে যে, কায়োল স্পাইন রোড বরাবর একটি সাততলা বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে। দৃশ্যত ত্রুটিপূর্ণ কাঠামোর ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার পর এই নির্দেশনা এসেছে। নিচে স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে আলোচ্য ছবিটি (বামে) ও টুকো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিটির (ডানে) মধ্যে তুলনা দেখুন--
সার্চ করে টুইটারে নাইরোবির গভর্নর মাইক সোনকোর ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড টুইটার একাউন্টে করা একটি টুইটও খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে তিনি সাত তলা ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। পোস্টটি দেখুন--
এদিকে, ভবনটির আলোচ্য ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্ট চেক সংস্থা এএফপি ছবিটি যাচাই করে বিভ্রান্তিকর বা এডিটেড হিসেবে চিহ্নিত করে। "No, this is not a photo of a dangerous building under construction in Nairobi“ শিরোনামে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ENS প্যারিস-স্যাক্লে নির্মিত একটি ফরেনসিক টুল ব্যবহার করে দেখা গেছে ছবিটি নকল। প্রকৃত বিল্ডিংটি সাত তলা উঁচু। উপরের ফ্লোরটিকে দুইবার নকল করে ছবিটিকে কারসাজি করা হয়েছে যাতে এটিকে লম্বা এবং আরও বিপজ্জনক দেখা যায়।
অর্থাৎ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ২০১৮ সালে ভেঙে ফেলা সাত তলা একটি ভবনের ছবিকে এডিট করে নয়তলা ভবন তৈরি করে সম্প্রতি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং কেনিয়ার নাইরোবির ভেঙে ফেলা সাত তলা একটি ভবনকে এডিটের মাধ্যমে বাঁকা করে নয় তলা ভবন দেখিয়ে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।