ভিন্ন তরুণের ছবি দিয়ে নামাজে এক যুবকের মৃত্যুর পুরোনো খবর প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সিলেটে নামাজে মৃত্যুর এই খবরটি ২০২০ সালের, আর ছবিটি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া বরিশালের এক তরুণের।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সিলেটে নামাজে সিজদারত অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যুর খবর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও আইডি থেকে সম্প্রতি পোস্ট করা হচ্ছে। একাধিক অনলাইন পোর্টালের উক্ত খবরের সাথে এক যুবকের ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। এমন দুটি পোস্ট দেখুন এখানে, এবং এখানে।
গত ৩০ জুলাই 'সপ্ন-Dream' নামের একটি ফেসবুক পেজে অনলাইন পোর্টালের একটি লিংক শেয়ার করে বলা হয়, ''জুমার নামাজে' সিজদারত অবস্থায় "যুবকের মৃত্যু"!'।
"নামাজে সি'জদারত অবস্থায় না ফে'রার দেশে চলে গেলেন সুজন" শিরোনামে প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালের ওই খবরটিতে বলা হয়,
"সিলেটের বিশ্বনাথ উপজে'লার দৌলতপুর ইউনিয়নের কা'লি'টে'কা গ্রামের সুজন মিয়া পেশায় রঙ মিস্ত্রী। আজ শুক্রবার বিকেলে তার বি'য়ে'র দিন ধার্যের কথা ছিল। হবু শশুরবাড়ির লোকজনের আ'প্যা'য়'নের জন্যে নিজ হাতে সব প্র'স্তু'তি সম্পন্ন করে রেখেছিলেন। কিন্তু সকাল থেকেই বুকে ব্যথা অ'নু'ভ'ব করতে থাকেন তিনি। দুপুরে জু'মার নামাজ প'ড়'তে বুকে ব্যথা নিয়েই গ্রামের জামে ম'স'জি'দে যান সুজন। ব্যথা প্রচণ্ড আ'কা'র ধারণ করলে তিনি সি'জ'দা'য় পড়ে যান এবং সি'জ'দারত অবস্থায় মৃ'ত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।"
খবরটির ডেটলাইনে প্রকাশের সময় লেখা আছে ৩০ জুলাই এবং বর্ণনায় শুক্রবারের কথা উল্লেখ আছে। ফলে পাঠকের কাছে খবরটি গত ৩০ জুলাই ( শুক্রবার) এর মনে হতে পারে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সুজন মিয়া (৩৫) নামের যুবকের মৃত্যুর খবরটি ২০২০ সালের।
কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনে 'বিশ্বনাথে মসজিদে সিজদারত অবস্থায় যুবকের মৃত্যু' শিরোনামে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, "সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নিজের বিয়ে নির্ধারণের দিন সুজন মিয়া (৩৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি দৌলতপুর ইউনিয়নের কালিটেকা গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে। আজ শুক্রবার গ্রামের মসজিদে সিজদারত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।"
বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরে ওই যুবকের একটি ছবিও যুক্ত করা আছে, যা আলোচ্য অনলাইন পোর্টালের খবরের সাথে যুক্ত ছবিটি থেকে ভিন্ন।
অনুসন্ধানের পর দেখে গেছে, দুটি ছবি আলাদা দুই ব্যক্তির। অনলাইন পোর্টালের খবরের সাথে যুক্ত করা ছবিটি ফেসবুকে 'Eusub Sharif' নামের একটি আইডি থেকে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা হয়।
বুম বাংলাদেশ 'Eusub Sharif' আইডি থেকে আপলোড করা অন্য ছবির সাথে আলোচ্য ছবিটি মিলিয়ে এবং আইডির ব্যবহারকারী নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া তরুণ মো. ইউসুফ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে তথ্য-উপাত্ত যাচায়ের পর নিশ্চিত হয়েছে অনলাইন পোর্টালে ব্যবহৃত ছবিটি তাঁরই। ইউসুফ মিয়ার বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালী জেলার আলীপুর গ্রামে। মূলত এই ছবিটিই সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সুজন মিয়ার দাবি করে অখ্যাত অনলাইন পোর্টালের খবরের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
অর্থাৎ ভিন্ন এক তরুণের (বলা বাহুল্য, যিনি বেঁচে আছেন) ছবি ব্যবহার করে, ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বরের একটি পুরোনো খবরকে নতুন করে একাধিক অনলাইন পোর্টালে কোন সোর্স ছাড়াই প্রকাশ করা হচ্ছে।
সুতরাং সিলেটের বিশ্বনাথে নামাজরত অবস্থায় যুবকের মৃত্যুর পুরোনো খবরের সাথে ভিন্ন এক তরুণের ছবি যুক্ত করে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে নতুন করে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
বি.দ্র: প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য যুক্ত করে আপডেট করা হয়েছে।