ছবির ঘুড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘুড়ির রেকর্ড গড়েনি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়িটির আকার ৯৫০ বর্গমিটার, যা কুয়েতে বানানো।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি সংবাদ শেয়ার করে বলা হচ্ছে, সবচেয়ে বড় ঘুড়ি বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশের ছেলেরা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৮ মার্চ 'Todays News' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি সংবাদ পোস্ট করে লেখা হয়, "সবচেয়ে বড় ঘুড়ি বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়লো বাংলার ছেলেরা, ভাইরাল ভিডিও"। স্ক্রিনশট দেখুন---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। বাংলাদেশে বানানো কোনো ঘুড়ি বিশ্ব রেকর্ড করার কোনো খবর কোনো নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়িটির আকার ৯৫০ বর্গমিটার, যা কুয়েতের এক ব্যক্তি ২০০৫ সালে তৈরি করেছিলেন।
প্রথমত
ফেসবুক পোস্টটির সাথে যুক্ত সংবাদের লিংকে ঢুকে দেখা যায়, টুডে নিউজ নামে একটি অখ্যাত অনলাইন পোর্টালে 'সবচেয়ে বড় ঘুড়ি বানিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়লো বাংলার ছেলেরা, ভাইরাল ভিডিও' শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে সবচেয়ে বড় ঘুড়ি বানিয়ে কোনো বিশ্ব রেকর্ড অর্জনের ব্যাপারে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এই প্রতিবেদনটির সাথে একটি ইউটিউব ভিডিও যুক্ত করা হয়েছে। 'বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কয়রা বা ঝাপা ঘুড়ি লম্বা ৫৭ ফিট😇' শিরোনামের ওই ভিডিওটিতে ঘুড়িটির আকার ৫৭ ফুট বলে দাবি করা হয়েছে। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন---
দ্বিতীয়ত
বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়ি সম্পর্কে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে গিয়ে 'Largest kite flown' শিরোনামের একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েতের আব্দুল রহমান আল ফারসি নামে এক ব্যক্তি ৯৫০ বর্গমিটারের একটি ঘুড়ি তৈরি করেন। সেটিই এখনো পর্যন্ত গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উল্লেখিত বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়ি। স্ক্রিনশট দেখুন--
তৃতীয়ত
আরো সার্চ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্যাবল চ্যানেল ডিসকভারির ওয়েবসাইটে চলতি বছরের গত ২০ ফেব্রুয়ারি 'The Biggest Kite in the World' শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধে বলা হয়, "বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ঘুড়িটিকে বলা হয় আল মাদ্জ (গৌরব) কাইট। এটি ছিল দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করতে চাওয়া কাতারি কবি হুসেইন আল খায়েরিনের মস্তিষ্কপ্রসূত। বিশালাকার ঘুড়িটি কাতারের পতাকার রঙে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রের আমির এইচএইচ শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির ছবি রয়েছে। ঘুড়িটির পরিমাপ ২,৬৭৩ বর্গ মিটার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কাতারে ওড়ানোর আগে ঘুড়িটি চীনে পরীক্ষা করা হয়।" অর্থ্যাৎ আল মাদ্জ নামের এই ঘুড়িটি গিনেস ওয়ার্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত না হলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়ি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া, বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের অনলাইন ভার্সনে 5 kites that made world records শিরোনামের একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, কুয়েতের আবদুল রাহমান আল ফারসির বানানো ঘুড়িটি হলো বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়ি। এছাড়াও, উচ্চতা, ওড়ার গতি, একই সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘুড়ি একসাথে ওড়ানো এবং সবচেয়ে বেশী সময় ধরে ঘুড়ি ওড়ানোর ভিত্তিতে আরো ৪টি ক্যাটেগরির উল্লেখ সেখানে থাকলেও বাংলাদেশের বানানো কোনো ঘুড়ি সেখানে স্থান পায়নি।
সুতরাং বাংলাদেশে বানানো একটি ঘুড়িকে ভিত্তিহীনভাবে বিশ্বের বৃহত্তম ঘুড়ি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।