নারিকেলের গরম পানি পানে ক্যান্সার নিরাময় হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়
নারিকেলের গরম পানি খেলে ক্যান্সার আরোগ্য হয় মর্মে কোনো পরামর্শ দেননি টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ডা. রাজেন্দ্র বাডওয়ে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে একটি তথ্য পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ক্যান্সার হাসপাতাল মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক রাজেন্দ্র বাডওয়ে বলেছেন গরম পানিতে নারিকেলের টুকরো ফেলে পান করলে ক্যান্সারের কোষ নষ্ট হয়। কোনো ব্যক্তি যদি অনেক দিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত থাকে তাহলে তাকে নিয়মিত এই পানি পান করতে বলা হয় পোস্টগুলোতে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২১ মার্চ 'Sohrab Khan' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে করা এক পোস্টে লেখা হয়, "আপনাদের সবাইকে বিনীত নিবেদন যে কোনও ক্যান্সার রোগ গ্রস্ত ব্যক্তি জানা থাকলে তাকে বলুন চিকিৎসা করে করে হয়রান হয়ে গেলে, নারকেল ফুটানো গরম জল খেতে। টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালের ড. রাজেন্দ্র এ. বুড়বে বলেছেন এই সংবাদ যদি প্রতি দশজনকে পাঠানো হয় তবে একজনের নিশ্চয়ই কাজে লাগবে। আমি ছ'জনকে পাঠাতে পেরেছি, আপনিও পারবেন আপনার দায়িত্ব পালনের জন্য। নারকেলের গরম জল সারা জীবনের জন্য ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে পারে ক্যান্সারের কোষ নষ্ট করে। [...]"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাডওয়ের দাবি করে ভুয়া চিকিৎসা পরামর্শ প্রচারিত হচ্ছে। আবার গরম পানিতে নারিকেল টুকরো ফেলে পান করলে ক্যান্সার কোষ নষ্ট হবার দাবিটিরও সত্যতা নেই।
কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, ২০১৯ সালের ১৭ই মে ‘CHD Group’ এর ফেসবুক পেজে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। ডা. বাডওয়ে স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টাটা মেমোরিয়ালের ডিরেক্টর ডা. রাজেন্দ্র বাডওয়ে এমন কোনো দাবি করেনি। গরম পানিতে নারিকেলের টুকরো ফেলে পান করলে ক্যান্সার কোষ নষ্ট হয় মর্মে করা দাবিটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলেও উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল এমন ধরণের বিভ্রান্তিকর স্বাস্থ্য পরামর্শ থেকে সাধারণকে সচেতন থাকতে অনুরোধ করা হয়।
এই সূত্রধরে সার্চ করার পর, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ায় "Hot coconut water not cure for cancer: Hospital" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৯ সালের ১৮ মে প্রকাশিত হয়েছে। আলোচ্য দাবিটি সম্পর্কে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সি এস পরমেশের মন্তব্য নেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। যেখানে তিনি জানিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে এই ভাইরাল বার্তাটি ক্যান্সার রোগীদের দিশাহীন ও বিভ্রান্ত করছে। দীর্ঘদিন ধরে এই গরম পানি পান করলে উল্টো ফল হতে পারে। এ ধরণের তথ্যের উপর ভরসা করে রোগীদের নিজের ক্ষতি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের দ্য হিন্দু সংবাদমাধ্যমেও।
নারিকেলের গরম পানি বা গরম পানিতে নারিকেলের টুকরো দিয়ে পান করলে আদৌ কোনো উপকার হয় কিনা জানার জন্য সার্চ করলে, 'The Healthy Indian Project' -এর সাথে প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মনিশ সিংঘালের একটি সাক্ষাৎকার পাওয়া যায়। সেখানে ডা. মনিশ নারিকেলের বেশ কিছু গুনাগুণের কথা উল্লেখ করলেও, গরম পানিতে নারিকেল টুকরো ফেলে পান করলে ক্যান্সার কোষ নষ্ট হবার দাবিটি খারিজ করে দেন।
অর্থাৎ ডা. রাজেন্দ্র বাডওয়ের দাবি করে প্রচারিত পরামর্শটি বানোয়াট এবং গরম পানিতে নারিকেল টুকরো ফেলে পান করলে ক্যান্সার কোষ নষ্ট হবার দাবিটিও সঠিক নয়।
দাবিটি এরআগে এএফপি ফ্যাক্ট চেক সহ একাধিক সংস্থা যাচাই করে ভিত্তিহীন সাব্যস্ত করেছে।
সুতরাং টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাডওয়ের দাবি করে বানোয়াট স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।