জাতিসংঘ অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণার দাবিটি সঠিক নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, জাতিসংঘ অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বিকৃতি দেয়া নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি, পেজ ও গ্রুপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে ৯৪ টা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষনা দিয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর 'Sheikh Enan' নামের আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়, "আলহামদুলিল্লাহ, জাতিসংঘে অধিবেশনে ২২/০৯/২০২৪ইং ৯৪ টা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষনা দিয়েছে। ২৩/০৯/২০২৪ আজ আরো ২৪ দেশের রাষ্টপ্রধান সমর্থন করছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে যাবেন নিজের পদ ফিরে পাবার জন্য। আইনের মাধ্যমে মোকাবেলা করে সরকারের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করবেন।। বর্তমান আইন জটিলতা শেষ করে খুব দ্রুত সময়ে বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষন প্রদান করবেন। একটু অপেক্ষা করুন এবং তার উপর আস্থা রাখুন। এ আঁধার কেটে যাবে।শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন করে আলো ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে 'সামিট অব দ্য ফিউচার' শীর্ষক কার্যক্রম চলে। যেখানে শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আলোচ্য দাবির পক্ষে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে কোনো ধরণের প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে নিয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা অবশ্যই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত ও প্রচারিত হওয়ার কথা।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "Summit of the Future" শিরোনামে 'জাতিসংঘের' ওয়েবসাইটে সাধারণ পরিষদের ৭৯ তম অধিবেশনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, গত রোববার ও সোমবার (২২-২৩ সেপ্টেম্বর) অধিবেশনের 'সামিট অব দ্য ফিউচার' শীর্ষক কার্যক্রম চলে। যেখানে বৈশ্বিক সুশাসনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপ্রধানরা। স্ক্রিনশট দেখুন--
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে 'Summit of the Future' সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, জাতিসংঘের রাষ্ট্রপ্রধানরা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে এমন স্বীকৃতি দিলে তা দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, টুইটার, টেলিগ্রাম এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এসব এক্যাউন্টগুলোতে কোনো ধরণের তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কি ওয়ার্ড সার্চ করে ‘Bangladesh Awami League’ নামক আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর একটি পোস্ট করা হয়। যেখানে বলা হয়, “আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেইজ, টেলিগ্রাম চ্যানেল, টুইটার [ X ], ইউটিউব চ্যানেল এর বাইরে অন্য কোন সামাজিক মাধ্যমের পেইজ বা মিডিয়া থেকেও যেকোন দলীয় আপডেট আসলে তা অবশ্যই আওয়ামী লীগের যোগাযোগ মাধ্যম থেকে যাচাই [ ভেরিফাই ] করার জন্য সবাইকে বিনীত অনুরোধ করছি।” স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে ৯৪ টা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী বলে ঘোষনা দেয়নি।
সুতরাং জাতিসংঘের অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে বৈধ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে বলে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।