একশ রুপির ট্যাবলেটে ক্যান্সার নিরাময়ের খবরটি বিভ্রান্তিকর
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গবেষণাটি এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে এবং এটি এখনও পর্যাপ্তভাবে মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে গণমাধ্যমের পেজ সহ একাধিক অ্যাকাউন্ট, পেজ এবং গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, মাত্র একশ রুপিতে ক্যান্সার নিরাময়ের ট্যাবলেট আবিষ্কার করেছে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল। বিষয়টিতে সংবাদ প্রকাশ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের পেজে শেয়ার করেছে আজকের পত্রিকা, আমাদের সময় অনলাইন, বার্তা ২৪, জাগোনিউজ ২৪, ডেইলি ক্যাম্পাস ও ঢাকা পোস্ট। এছাড়াও এ সংক্রান্ত খবরের লিংক যুক্ত করে প্রকাশিত সাধারণ একটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মূলধারার গণমাধ্যম 'আজকের পত্রিকা' এর ফেসবুক পেজ থেকে "১০০ রুপিতে ক্যান্সারের ট্যাবলেট আনছে ভারত" লেখা সম্বলিত একটি নিউজ কার্ড পোস্ট করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য খবরটি সিদ্ধান্তমূলকভাবে প্রচার করার বিষয়টি বিভ্রান্তিকর। এ সংক্রান্ত গবেষণাটি এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে এবং এটি এখনও পর্যাপ্তভাবে মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি। এ বিষয়ে টাটা মেমোরিয়ালের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত পেপারটি এখনও প্রকাশিত না হওয়ায় বর্তমান আবিষ্কারটি এখনও হাইপোথিসিস বলে গণ্য করা হচ্ছে।
আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খবরটি তারা ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি'কে দেওয়া টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ ক্যান্সার চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাদভে এর সাক্ষাৎকার থেকে তৈরি করেছে। পরবর্তীতে সার্চ করে "Tata Institute Claims Success In Cancer Treatment - With "Rs 100 Tablet" শিরোনামে প্রকাশিত এনডিটিভি'র এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এনডিটিভি তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে উল্লেখ করেছে, "টাটা ইনস্টিটিউট ক্যান্সারের চিকিৎসায় বড় সাফল্যের দাবি করেছে"। তবে আজকের পত্রিকা এনডিটিভি থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন করলেও তাদের প্রতিবেদন ও নিউজ কার্ডে 'দাবি' শব্দটি পাওয়া যায়নি বরং সরাসরি সিদ্ধান্তমূলক শিরোনামেই তারা খবর প্রকাশ করেছে। কেবল আজকের পত্রিকা-ই নয় একইভাবে সিদ্ধান্তমূলক শিরোনাম করেছে আরো বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। ঢাকা পোস্টের এ সংক্রান্ত নিউজ কার্ডটি দেখুন--
এই খবরটির শিরোনামে 'দাবি' শব্দটি উল্লেখ করা যে কারণে প্রয়োজন
এনডিটিভির আলোচ্য প্রতিবেদনের সাথে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ ক্যান্সার চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাদভে এর সাক্ষাৎকারের ভিডিওটিও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি পর্যালোচনা করে দেখা যায় ক্যান্সার চিকিৎসক রাজেন্দ্র বাদভে বলেছেন (২.৩৯ মিনিট থেকে), "এটি এখনো মানুষের মাঝে পরীক্ষা করা হয়নি।" যেহেতু পরীক্ষা-নীরিক্ষা এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি তাই এই সংবাদটি 'দাবি' হিসেবে গণমাধ্যমে প্রচারের পরিবর্তে সিদ্ধান্তমূলক শিরোনামে প্রচারের বিষয়টি বিভ্রান্তিকর।
এ বিষয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান 'বুম লাইভ'-এ গত ৮ মার্চ "টাটা মেমোরিয়ালের ১০০ টাকার ওষুধের ক্যান্সার নিরাময় করার দাবি ভুল" শিরোনামে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "গবেষণাটি এখনও অবধি মানুষের উপর পরীক্ষা না হওয়ায় অসম্পূর্ণ। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বুমকে সাবধান করে জানান, গবেষণাটি এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে কারণ মানুষের মধ্যে পরীক্ষা এখনও অপর্যাপ্ত। তারা আরো জানান যে, এ বিষয়ে কেবলমাত্র একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত পেপারটি এখনও প্রকাশিত না হওয়ায় বর্তমান আবিষ্কারটি এখনও হাইপোথিসিস বলে গণ্য করা হচ্ছে। উপরন্তু দুটি গবেষণা করা হয়েছে; একটি ইঁদুর এবং একটি মানুষ নিয়ে। কিন্তু অনেক সংবাদ প্রতিবেদনই কেবল প্রাণীবিষয়ক গবেষণাটির উপরই প্রাধান্য দিয়েছে।" (সংক্ষেপিত)। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ এ সংক্রান্ত গবেষণাটি এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে কারণ এটি এখনও পর্যাপ্তভাবে মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি। এ বিষয়ে টাটা মেমোরিয়ালের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত পেপারটি এখনও প্রকাশিত না হওয়ায় বর্তমান আবিষ্কারটি এখনও হাইপোথিসিস বলে গণ্য করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য একাত্তর টেলিভিশন, দেশ রূপান্তর সহ বেশকিছু গণমাধ্যম বিষয়টিকে 'টাটা মেমোরিয়ালের দাবি' হিসেবেই খবর প্রকাশ করেছে। এদিকে সময় টেলিভিশন তাদের ফেসবুক পোস্টের নিউজ কার্ডে দাবির বিষয়টি উল্লেখ করলেও অনলাইন সংস্করণের শিরোনামে দাবির বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেনি। সময় টেলিভশনের অনলাইন প্রতিবেদন এর ফলে সৃষ্টি হওয়া বিভ্রান্তির নমুনা দেখুন--
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে "১০০ রুপিতে ক্যানসার নিরাময়ের ট্যাবলেট আনছে ভারত" মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।