শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি দেয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি দেওয়ার কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৪ জুন "রুমিন ফারহানা 2.0" নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার চিঠি দিলো যুক্তরাষ্ট্র | তত্ত্বাবধায়ক দেওয়ার চিঠি দিলো ইইউ ২৭দেশ | BNP"। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ এই ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি দেয়ার কোনো তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। এছাড়া আলোচ্য পোস্টের ক্যাপশনে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চিঠি পাঠিয়েছে বলা হলেও পোস্টের ভিডিওতে এব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি।
আলোচ্য পোস্টে যুক্ত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে কয়েকজন বক্তা একাধিকবার একটি চিঠির উল্লেখ করেছেন। ভিডিওটির ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে একজন বক্তাকে বলতে শোনা যায়, "আপনারা জানেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্টকে ইইউর ৬ এমপির চিঠি।" এছাড়াও, সম্পূর্ণ ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে একাধিকবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ পার্লামেন্ট সদস্যের চিঠির ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সূত্র ধরে ইইউ সদস্যদের পাঠানো চিঠির ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গত ১৩ জুন দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে "বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের চিঠি" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা জোসেপ বোরেলকে বলেছেন— বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে অনুরোধ করছি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত করে চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে আহ্বান জানাচ্ছি।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, আজকের পত্রিকা এবং ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটেও একই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে এরকম কোনো সংবাদ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও এরকম কোনো নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের বিষয়ে বা সরকারের বিষয়ে নতুন কোনো অবস্থান নিলে তা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট কিংবা ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে এই দুই ওয়েবসাইটে সার্চ করেও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি নতুন ভিসানীতি চালু করা হয়। যা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এই নতুন ভিসানীতি চালু করা হয় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে, ওই ভিসানীতির আগে বা পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি এবং কোনো চিঠির ব্যাপারে উল্লেখও করা হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের চিঠি দেয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন।
সুতরাং সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ের উপরে বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার চটকদার ক্যাপশন লিখে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।