সমুদ্রের ঢেউ মেঘ ছুঁয়ে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সমুদ্রের পানির উপর ঘণিভূত বাষ্প এবং উঁচু ঢেউয়ের ঘর্ষণে সৃষ্ট এই বিচ্ছুরণকে বলা হয় সি স্প্রে এরোসোল।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে উঁচু সামুদ্রিক ঢেউয়ের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সমুদ্রের ঢেউ আকাশের মেঘ ছুয়ে যাচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৪ মে 'Das Ita' নামের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়, "এমন জিনিস কোনোদিন দেখিনি তো!!!🔥❤️ সমুদ্রের ঢেউ মেঘ ছুয়ে যাচ্ছে"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর আর বিষয়বস্তুর খবরটিও পুরোনো। ঢেউয়ের সাথে মেঘের মিলন নয়, মূলত সমুদ্রের পানির উপর ঘণিভূত বাষ্প এবং উঁচু ঢেউয়ের ঘর্ষণের সৃষ্ট এই বিচ্ছুরণকে বলা হয় সি স্প্রে এরোসোল।
কি-ওয়ার্ড এবং ভিডিও থেকে নেয়া ইমেজ রিভার্স সার্চ করার পর, কোনর হেইগি নামের এক সামুদ্রিক ভিডিওগ্রাফারের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে মূল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৯ সালে ১৫ মে মাসে পোস্ট করা হয়েছে। তবে মূল ভিডিওতেও ঢেউয়ের আকাশের মেঘ ছোঁয়ার কোনো তথ্য নেই।
মূল ভিডিওটি ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায়, মেঘের সাথে ঢেউয়ের সংযোগ নয় বরং সমুদ্রের ঢেউয়ের উপরে জলীয় বাষ্পের এক ধরনের বিচ্ছুরণ নজরে আসে। বিজ্ঞানের ভাষায় সমুদ্রের পানির উপর ঘণিভূত বাষ্প এবং উঁচু ঢেউয়ের ঘর্ষণের সৃষ্ট এই জলীয় বাষ্পের বিচ্ছুরণকে বলা হয় সি স্প্রে এরোসোল। সি স্প্রে এরোসোল কী, এবং তা কী ভাবে তৈরি হয়, সাইন্স ডাইরেক্ট-এর একটি প্রতিবেদনে তার বিবরণ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। নিচের ভিডিওতে সি স্প্রে এরোসোলের একটি ধারণা পাওয়া যাবে।
যাইহোক, এই বিচ্ছুরণকেই খালি চোখে ঢেউয়ের মেঘ ছুয়ে যাওয়া মনে হতে পারে, যা এই ভিডিওতে হয়েছে। আবার এই ভিডিওটি এমনভাবে ধারণ করা হয়েছে যেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা ও মেঘের উচ্চতা সমান মনে হয়। বাস্তবিকভাবে এটিও সম্ভব নয়। ইতিহাসে ঘটা সর্বোচ্চ ঢেউ উচ্চতা ছিল ১,৭২০ ফুট যা ১৯৫৮ সালে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ঘটা একটি ধ্বংসাত্মক সুনামির সময় মাপা হয়েছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপরের মেঘটি ন্যূনতম ৬,৫০০ ফুট উচ্চতায় থাকতে পারে। ফলে এদের মিলন ঘটা অতিপ্রাকৃত অবস্থা ব্যতীত সম্ভব নয়। এই ভিডিওতে স্পষ্টভাবেই সেটি ঘটেনি।
দাবিটি এর আগে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা SM Hoax Slayer, স্বাধীন তথ্য যাচাইকারী হোক্সআই এবং ইন্ডিয়া টুডে অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) যাচাই করে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অর্থাৎ সমুদ্রের ঢেউয়ের উপরে জলীয় বাষ্পের এক ধরনের বিচ্ছুরণ তথা সি স্প্রে এরোসোল-এর ভিডিওকে ঢেউয়ের মেঘ ছুঁয়ে যাওয়া বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।