সুইডেনে যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি ও প্রতিযোগিতা আয়োজনের দাবিটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সুইডেন যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বা যৌনতাকেন্দ্রিক কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজনও করছে না।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেন যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৫ জুন 'Mahboob Areef Kintu' নামে একটিব আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে সুইডেন। আমরা ঠিক এমন একটি বিশ্বে বসবাস করছি যেখানে অনেক দেশ আপনাকে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে দেয় না, মানুষকে (নারী) হিজাব নামের কালো বস্তা দিয়ে সুরক্ষার নামে ঢেকে দেয়া হয়, প্রাপ্ত বয়স্কদের যৌন মিলন বা সেক্স মানে অপরাধ, সেখানে সুইডেন এখন এটিকে একটি খেলায় পরিণত করছে! ৮ই জুন সুইডিশ সেক্স ফেডারেশন কর্তৃক গথেনবার্গ শহরে প্রথম ইউরোপীয় সেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নশিপটি কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে এবং এতে অংশগ্রহণকারীরা প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা প্রতিযোগিতা করবে। চ্যাম্পিয়নশিপটি কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীরা তাদের ম্যাচ বা ক্রিয়াকলাপগুলির সাথে জড়িত হওয়ার জন্য পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় পাবেন। অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে বলতে গেলে, বিভিন্ন দেশের ২০ জন এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য আবেদন করেছেন। তিনটি জুরি এবং দর্শক রেটিং এর মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্ধারণ করা হবে। প্রতিটি শৃঙ্খলায়, অংশগ্রহণকারীরা 5 থেকে 10 পয়েন্টের মধ্যে স্কোর করতে পারে। প্রতিযোগীরা ১৬ টি বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে যার মধ্যে রয়েছে প্রলোভন, ওরাল সেক্স, অনুপ্রবেশ, চেহারা, বডি ম্যাসেজ, ইরোটিক জোন অন্বেষণ, অবস্থান পরিবর্তন, অবস্থানে সৃজনশীলতা, অর্গাজমের সংখ্যা এবং সহনশীলতা।
ইউরোপীয় সেক্স চ্যাম্পিয়নশিপ বৈচিত্র্যকে মূল্য দেয় এবং যেকোনো লিঙ্গ বা যৌন অভিমুখের প্রতিযোগীদের গ্রহণ করে। আয়োজকরা জোর দিয়েছেন যে যৌন অভিমুখিতা এই খেলায় একটি কৌশলগত ভূমিকা পালন করতে পারে, যা তারা বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যতে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিও এই খেলাতে অংশগ্রহণ গ্রহণ করবে। "ক্রীড়া কৌশলের অংশ হিসাবে যৌন অভিমুখী-করণের অন্তর্ভুক্তি ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে একটি যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে," প্রতিযোগিতার আয়োজক বলেছেন। সুইডিশ ফেডারেশন অফ সেক্সের সভাপতি ড্রাগন ব্রাটিচ তার বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন যে একটি খেলা হিসাবে যৌনতার স্বীকৃতি অনিবার্য। তিনি প্রশিক্ষণের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে যৌন কার্যকলাপের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার সম্ভাবনা তুলে ধরেন। “অন্য যেকোনো খেলার মতো, যৌনতায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। অতএব, এই ডোমেনে প্রতিযোগিতা শুরু করা মানুষের পক্ষে শুধুমাত্র যৌক্তিক, "ব্র্যাটিচ মিডিয়াকে ব্যাখ্যা করেন।"। ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। সুইডেন যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বা যৌনতাকে কেন্দ্র করে কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজনও করেনি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সুইডেনভিত্তিক পত্রিকা গোটবর্গ-পোস্টেনের ওয়েবসাইটে গত ২৬ এপ্রিল "The Swedish Sex Federation is nobbed by the National Sports Federation" প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুইডেনের সুইডিশ সেক্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংস্থা গত জানুয়ারি মাসে যৌনতাকে একটি খেলা হিসাবে স্বীকৃতিদান করা এবং যৌনতার উপরে একটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করার জন্য সুইডিশ স্পোর্টস কনফেডারেশনের কাছে আবেদন করে। সুইডিশ সেক্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা দ্রাগান ব্র্যাটিক জানুয়ারিতে আবেদন জমা দিয়েছিলেন এবং সুইডিশ কনফেডারেশনের সদস্যও হতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে কনফেডারেশন আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা করে। ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বিয়র্ন এরিকসন এ ব্যাপারে বলেন, "এটি আমাদের শর্ত পূরণ করবে না এবং আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে আমি বলতে পারি। আমাদের করার মতন আরও অনেক কাজ আছে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, সুইডেনভিত্তিক আরো দুটি গণমাধ্যম টিভি৪ এবং ভেরিজেস রেডিও-তে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন থেকেও পাওয়া যায় একই তথ্য। অর্থ্যাৎ সুইডেনের সুইডিশ সেক্স অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দ্রাগান ব্রাটিক দেশটিতে যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার আবেদন করেন। তবে, পরবর্তীতে সেই আবেদন নাকচ করে দেয় সুইডিশ স্পোর্টস কনফেডারেশন।
সুতরাং, সুইডেনে যৌনতাকে খেলা হিসেবে স্বীকৃতি দান এবং যৌনতা নিয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজনের ভুয়া দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।