শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার দাবিটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর কোনো যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার খবরটি ভিত্তিহীন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে একটি ইউটিউব লিংক পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৪ জানুয়ারি 'Abdul Halim Kaari' নামের একটি আইডি থেকে ইউটিউব লিংকটি পোস্ট করা হয়। ওই লিংকের শিরোনামে বলা হয়, "হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'সহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার খবর নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া, একাধিক টিভি চ্যানেলের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিভিন্ন পুরোনো খবরের ভিডিও কেটে যুক্ত করে আলোচ্য পোস্টের ইউটিউব ভিডিওটি বানানো হয়েছে।
ফেসবুকে পোস্টকৃত ইউটিউবে প্রচার করা ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, 'Jamuna TV' এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত "যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া নিষেধাজ্ঞা; কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর?" শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মাসে র্যাবের সাবেক ও তৎকালীন ৭ কর্মকর্তারা ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।" যমুনা টিভির এই ভিডিওটির প্রেজেন্টার লিংকের সাথে আলোচ্য ফেসবুক পোস্টে যুক্ত ইউটিউব ভিডিওটির কিছু অংশের মিল রয়েছে। যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশট (বামে) এবং আলোচ্য ভিডিওটি থেকে নেয়া স্ক্রিনশটের (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
এছাড়াও, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "১৩ দেশের ৩৭ ব্যক্তির ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা" শিরোনামে 'Channel 24' এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ ডিসেম্বর প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "গত বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তান, চীন, ইরান, সুদান ও উগান্ডাসহ মোট ১৩টি দেশের ৩৭ জন ব্যক্তির ওপর অর্থনৈতিক ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।" চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এই ভিডিওটির প্রেজেন্টার লিংকের সাথে আলোচ্য ফেসবুক পোস্টে যুক্ত ইউটিউব ভিডিওটিরও কিছু অংশের মিল পাওয়া গেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এই খবরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া ৩৭ ব্যক্তির মধ্যে বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তির সম্পর্ক নেই।
এদিকে, গেল বছরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এবং পরে এই ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করার ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা রেকর্ড আইন অনুযায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়না। "ভিসা নীতির প্রয়োগ নিয়ে ডেইলি স্টারকে যা বললেন ডোনাল্ড লু" শিরোনামে গত ২২ সেপ্টেম্বর দ্যা ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, "আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম আমরা প্রকাশ করব না। কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।"
অর্থাৎ যুুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না, তাই কাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা জানারও কোনো উপায় নেই। এছাড়া, বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশি-বিদেশী কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩৭ ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে তা মূলধারার গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হত।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৭ ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে ভিত্তিহীন দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।