ছবির মেয়েটির ভারতের আইএএস পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার দাবিটি সত্য নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবির মেয়েটির নাম শ্রমণা যিনি একজন গ্রাফিক আর্টিস্ট এবং তার আইএএস পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার দাবিটি অসত্য।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজে ভারতের রাস্তায় একজন মেয়ের রিকশা চালানোর ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ছবিতে দেখানো মেয়েটি ইন্ডিয়ান আডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। রিকশায় যাত্রীর স্থানে উপবিষ্ট ব্যক্তি তাঁর বাবা। বাবার শ্রমকে সম্মান জানাতে মেয়েটি বাবাকে রিকশায় চড়িয়ে কলকাতা শহর প্রদক্ষিণ করেন। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১১ জুলাই "Shihab Rifat Alam" নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "যে মেয়েটি রিক্সা টানছে সে ২০১৮ বা ১৯ সালের ইন্ডিয়ান আডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (IAS) পরীক্ষায় প্রথম বা ২য় হয়েছে। যাত্রী তার বাবা। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে তার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হয়েছে, তাকে রিক্সায়(কলকাতার) চড়িয়ে সে শহর প্রদক্ষিণ করে। মেধাবী মেয়েটির বাবার ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও সন্মান জানানোর এক অভিনব প্রয়াস...সারা ভারতবাসী সহ সারা বিশ্বকে জানান দেয়া হলো।পিতার প্রতিটি ঘামের ফোটায় শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় কণ্যার অফুরন্ত ত্যাগ ও প্রতিদান। অবাক পৃথিবী চেয়ে চেয়ে দেখো।পিতা-কন্যার এই ভালবাসার বিনিময়ে আমরা বাকরুদ্ধ।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবির মেয়েটির নাম শ্রমণা পোদ্দার। তিনি পেশায় একজন গ্রাফিক আর্টিস্ট এবং ছবির ব্যক্তি তারা বাবা নন। কলকাতার হাতে চালানো রিকশাচালকদের প্রতি সহানুভূতি থেকে একজন রিকশাচালককে রিকশায় উঠিয়ে তাকে নিয়ে চালকবেশে কলকাতা শহর ঘোরেন তিনি। ওইসময়ে ছবিটি ধারণ করা হয়।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "mishti.and.meat" নামে একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। wildcraftin নামে আরেকটি ইন্সটাগ্রাম একাউন্টের পোস্ট থেকে ওই পোস্টটি ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল রিপোস্ট করা হয়। Wildcraft নামে একটি ব্র্যান্ডের জন্য ফটোশুট করার এক ফাঁকে তিনি ওই ছবিগুলো প্রথম তোলেন। ছবিটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, ছবির মেয়েটির নাম শ্রমণা পোদ্দার। পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার এবং ট্রাভেল ব্লগার শ্রমণা পোদ্দার কলকাতা শহরের হাতে টানা রিকশাচালকদেরকে অত্যন্ত পরিশ্রম করে রিকশা চালাতে দেখে ছোটবেলা থেকেই সহানুভূতিশীল ছিলেন। একবার কলকাতায় থাকাকালে তিনি নিজে রিকশা চালানোর অভিজ্ঞতা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই প্রেক্ষিতে রিকশার চালককে রিকশায় বসিয়ে কলকাতার শোভাবাজার এলাকায় রিকশা চালান তিনি। রিকশা চালানোর সময়ে তাদের ফটোগ্রাফার ওই ছবিগুলো ধারণ করেন। ইন্সটাগ্রাম পোস্টটি দেখুন--
এদিকে, এর আগে এই একই ছবি বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ২০১৮ সালে ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান বুম। সে সময় শ্রমণা পোদ্দারের সাথে যোগাযোগ করে বুম। বুমকে শ্রমণা জানান, তিনি একজন ট্রাভেল ব্লগার এবং তিনি আইএএস পরীক্ষাতেও প্রথম হননি। শ্রমণা আরও জানান, ফটোগ্রাফার যখন ছবিটি শুট করেছিলেন তখন এটি কোনও বিজ্ঞাপন প্রচারের অংশ ছিল না। অর্থ্যাৎ ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই তিনি আলোচ্য ছবিটি তোলেন।
অর্থ্যাৎ একজন ট্রাভেল ব্লগারের রিকশাচালকদের প্রতি সহানুভূতি থেকে রিকশা চালানোর ছবিকে বাবা-মেয়ের ছবি দাবি করে আবেগঘন গল্পসহ প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।