নবীজির রওজা মোবারক থেকে 'আসমানী সিঁড়ি' দেখার দাবিটি সঠিক নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, মসজিদে নববীতে মুসল্লীদের রোদ থেকে বাঁচাতে স্থাপিত ছাউনির ছায়াকে আসমানী সিঁড়ি বলে দাবি করা হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, সৌদি আরবের মদিনায় নবীজির রওজা মোবারক থেকে আসমানের দিকে একটি সিঁড়ি দেখা গেছে। এরকম কিছু ভিডিও পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২০ জুন 'দুরন্ত বার্তা' নামের একটি পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, 'নবীজির রওজা মোবারক থেকে আসমানী সিঁড়ি দেখা গেছে! সারা বিশ্ব দেখল ইসলামের কত ক্ষমতা! সুবহানাল্লাহও'। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, সৌদি আরবের মদিনায় নবীজির রওজা মোবারক থেকে আসমানী সিঁড়ি দেখা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। মদিনা শহরের মসজিদে নববীতে আগত মুসল্লীদের রোদ থেকে বাঁচাতে মুসল্লীদের মাথার উপরে স্থাপন করা ছাতার ছায়ার দৃশ্যকে আসমানী সিঁড়ি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
ভিডিওটি থেকে কীফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'burathanews-com' নামের একটি ওয়েবসাইটে 'Redness of the dome of the Prophet's Mosque (video)' শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মতন একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের ৬ মার্চ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজের রং লালচে দেখা গেলে আশেপাশের মুসল্লীরা একত্রিত হয়ে ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে থাকেন। এই ভিডিওটি থেকেই পরবর্তীতে মূলত গুজবটি ছড়িয়ে পড়ে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরে ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি 'Calm Sea' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এরকম একটি ভিডিও আপলোড করে দাবি করা হয়, নবীজি (স.) এর রওজা থেকে আসমানের দিকে একটি সিঁড়ি দেখতে পাওয়া যায়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এভাবে গুজবটি ছড়িয়ে পড়লে এর কয়েকদিন পর ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে dabegad-com নামের একটি ওয়েবসাইট 'The reality of the miracle of the appearance of a ladder over the green dome in the Prophet's Mosque' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা কি ওয়ার্ড সার্চ করে খুঁজে পায় বুম বাংলাদেশ। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের একটি ভিডিও থেকে উৎপত্তি হয় আলোচ্য গুজবটির। মূলত, প্রিন্স ফয়সালের আদেশ মোতাবেক সৌদি আরবের মদিনা শহরের তৎকালীন গভর্নর বিন সালমানের আদেশে রমজান মাসে এক বিশেষ উদ্দেশ্যে মসজিদে নববীর পাশে সবুজ গম্বুজটিতে বাতি জ্বালিয়ে সবুজ থেকে লাল রংয়ে পরিবর্তন করা হয়। আর সে সময়ে ধারণ করা ওই দৃশ্যের ভিডিওকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে এটিকে আসমানী সিঁড়ি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে, সেটি আসলে মসজিদে নববীর মুসল্লীদেরকে রোদের তাপ থেকে রক্ষার জন্য স্থাপিত ছাউনি বা ছাতার ছায়ার ছবি বলে উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিদেবনে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে বিষয়টিকে আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে কি ওয়ার্ড সার্চ করে 'madainproject.com' নামের একটি ওয়েবসাইটে 'Masjid al-Nabawi' শিরোনামের নিবন্ধে মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় মুসল্লিদের ছায়া প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত ছাউনি বা ছাতার ছবি খুঁজে পায় বুম বাংলাদেশ। স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় স্থাপতি ছাউনি বা ছাতার কিনারের ঢেউ আর আলোচ্য ভিডিওটির গম্বুজের উপরে দৃশ্যমান কথিত সিঁড়ির ঢেউয়ের তুলনা দেখুন--
এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মসজিদে নববীতে মুসল্লিদের ছায়া প্রদানের জন্য স্থাপিত ছাউনি বা ছাতার ছায়ার ছবিকে আসমানী সিঁড়ি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
অর্থ্যাৎ মসজিদে নববী থেকে কোনো আসমানী সিঁড়ি দেখা যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
সুতরাং মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় স্থাপিত ছাউনি বা ছাতার ছায়ার ছবিকে আসমানী সিঁড়ি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।