প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার তথ্যটি সঠিক নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি বরং পদে বহাল থেকেই আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণার কাজ করছেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
১১ ঘন্টা আগে 'আলী ভাই' নামের একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ | হঠাৎ বিএনপির পক্ষে বিশ্ব"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র নাম হিসেবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নাম দেখা যায়। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ ২২ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়।
প্রথমত, শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা লেখা হলেও ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে এরমধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয়ত, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে প্রায় দুই মাস আগে গত ২৭ অক্টোবর "প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে কোনো ডেডলাইন যুক্তরাষ্ট্র দেয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।... তিনি স্পষ্ট করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে কোনো ডেডলাইন দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সহিংসতামুক্ত এবং অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন দেখতে চাই যুক্তরাষ্ট্র। কোনো দলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষপাতিত্ব নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র।" অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের ব্যাপারে কোনোপ্রকার নির্দেশনা দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করেও যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশনা দেওয়ার সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে গত আগস্ট মাসে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর লোগো ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার একটি ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। তখন প্রথম আলো তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করে তারা এরকম কোনো সংবাদ প্রচার করেনি বলে নিশ্চিত করে। প্রথম আলোর ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে সার্চ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ও ছবি দেখতে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম দেখতে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সবশেষ খবর অনুযায়ী দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। "‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’: আরো একবার তরুণদের মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী" শিরোনামে বনিক বার্তায় প্রকাশিত খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নির্দেশনার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের তথ্যটি সঠিক নয়।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।