বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের ভুয়া দাবি
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধের দাবিটি সঠিক নয়।
সামাজিম মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গতকাল ২৮ নভেম্বর 'Mihir's GK' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে লেখা হয়, "বাংলাদেশে বন্ধ করা হল সমস্ত ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল। আজ থেকে বন্ধ করা হল সম্প্রচার!!"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, বাংলাদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধের দাবিটি সঠিক নয়। বাংলাদেশে রিপাবলিক বাংলা নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে আইনি নোটিশ জারি করা হলেও সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধের দাবিটি সঠিক নয়। সরেজমিন তদন্ত করেও দেখা গেছে বাংলাদেশে ভারতীয় টিভির সম্প্রচার চলমান রয়েছে।
আলোচ্য দাবিটির সম্পর্কে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে গত ১০ নভেম্বর "বাংলাদেশ নিয়ে গুজব, ভারতের টিভি নিষিদ্ধে আইনি নোটিশ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "বাংলাদেশ নিয়ে গুজব ছড়ানোর দায়ে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে তাদের নিউজ, কন্টেন্ট নিষিদ্ধ ও ব্লক চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। রবিবার (১০ নভেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।" তবে, ওই আইনি নোটিশ শুধু রিপাবলিক বাংলা'র বিরুদ্ধের দেওয়া হয়েছে, সব ভারতীয় টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধেও নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, ঢাকা পোস্ট এবং বার্তা টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত সংবাদ থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে গত ১৮ নভেম্বর '‘রিপাবলিক বাংলা’র কনটেন্ট নিষিদ্ধ ও ব্লকের নির্দেশনা চেয়ে রিট' শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "ভারতীয় চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তাদের নিউজ ও কনটেন্ট নিষিদ্ধ ও ব্লক করার দাবিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ রিট দায়ের করেন।" তবে, উক্ত প্রতিবেদনে রিপাবলিক বাংলার বিরুদ্ধে রিট করার ব্যাপারে বলা হলেও অন্যান্য সম্প্রচার মাধ্যমের সম্প্রচার নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রতিবেদনটিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি সময় টেলিভিশন, ঢাকা পোস্ট এবং ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য।
এদিকে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে বাংলাদেশে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সংবাদ নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ হয়েছে কিনা তা জানতে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে দেখেছে বুম বাংলাদেশ। ঢাকায় নিয়মিত টিভি দেখেন এমন একাধিক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আজও ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখেছেন। তন্মধ্যে মিরপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি আজও ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখেছেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে যশোর থেকে দিল আফরোজাও জানিয়েছেন, স্টার জলসা, জি বাংলাসহ ভারতীয় সব টিভি চ্যানেলই (যেসব চ্যানেল সাধারণত তিনি দেখেন) চালু আছে।
পাশাপাশি ক্যাবল অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের দপ্তর সচিব ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশে বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা অফিসকে দেওয়া হয়নি।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। বাংলাদেশে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি।
সুতরাং, বাংলাদেশে ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মর্মে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।