'আয়নাঘর গুজব' সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি গুম কমিশনের চেয়ারম্যান
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলামের বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে গুম কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর বক্তব্যের একটি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, আয়নাঘরে কিছুই পাওয়া যায়নি, প্রমাণিত হলো আয়নাঘর ছিল একটি গুজব। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৪ অক্টোবর 'তোমার অপেক্ষায়' নামের একটি একাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে উল্লেখ্য করা হয়, "আয়নাঘর ছিল গুজব। আয়নাঘরে কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রমাণিত হলো আয়নাঘর ছিল গুজব।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে 'আয়নাঘর গুজব' ছিল এমন কোনো মন্তব্য করেনি গুম কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী; বরং তার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "ডিবির গুম ঘরে গিয়ে কাউকে পায়নি কমিশন" শিরোনামে 'সময় টিভির' ইউটিউব চ্যানেলে ৩ অক্টোবর একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। যেই ভিডিওটির সঙ্গে ফেসবুকে ভাইরাল দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। যেখানে গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম বলেন, 'আমরা অলরেডি ডিজিএফআইয়ের 'আয়নাঘর' পরিদর্শন করেছি ২৫ সেপ্টেম্বর। আমরা দুই-একদিন আগে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) ও সিটিটিসির ইন্টারোগেশন সেল পরিদর্শন করেছি সরেজমিনে। আমরা সেখানে কোনো 'ভিকটিম অব এনফোর্সড ডিসঅ্যাপারেন্স' (বলপূর্বক গুমের শিকার) পাইনি। কারণ ৫ আগস্টের যে চেঞ্জ ওভার, তারপর হয়তো কিছুদিন ছিল। এরপর আমরা গিয়ে পাই নাই। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি এবং মানুষের অনেক রেসপন্স পেয়েছি।' ভিডিওটি দেখুন--
ভিডিওতে আয়নাঘরের অস্তিত্ব নেই- এমন কথা তাকে বলতে শোনা যায়নি।
পাশাপাশি কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "গুম থেকে ফেরা ব্যক্তিদের আয়নাঘর নিয়ে বক্তব্যের মিল পেয়েছে কমিশন" শিরোনামে 'বিজনেস স্টান্ডার্ড' পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম বলেন, 'আয়নাঘরের ভিকটিমের বক্তব্যের সঙ্গে আমাদের ভিজিট করা সেলগুলোর হুবহু মিল পেয়েছি। তবে ভিজিটের পর যেটা দেখেছি, সেলগুলো অনেকাংশে পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ দেয়ালে রং করে মুছে ফেলা হয়েছে, নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের ধারণা, ৫ আগস্টের পর ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। ডিজিএফআইয়ের যেটা আয়নাঘর বা ইন্টারোগেশন সেল, সেখানে আমাদের পরিদর্শনের আগে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে।' স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "নষ্ট করা হয়েছে ‘আয়নাঘরের’ আলামত: গুম সংক্রান্ত কমিশন" শিরোনামে ‘বিডিনিউজের’ একটি প্রতিবেদনে কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর বরাত দিয়ে বলা হয়, "২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছি। ১ অক্টোবর আমরা ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছি। তবে সেখানে কোনো বন্দি আমরা পাইনি। সম্ভবত ৫ অগাস্টের পর সেখানে থেকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। র্যাবেরটায় আমরা এখনও পরিদর্শন করি নাই, সামনে করব।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আয়নাঘর গুজব এমন কোনো মন্তব্য করেনি গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। বরং তার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং গুম কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম আয়নাঘর গুজব বলে মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।