বিএসএফের কাঁধে বহন করা মরদেহটি বাংলাদেশি নাগরিকের নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে বিএসএফের অভিযানে নিহত এক মাওবাদী বিদ্রোহীর লাশ বহনের ছবি এটি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাক পরে একটি মরদেহ বহনের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁধে বহন করা লাশের ছবিটি একজন বাংলাদেশি নাগরিকের। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১১ মে 'Noyon Khan' নামের একটি আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে উল্লেখ করা হয়, "ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ এর কাঁধে ঝুলছে বাংলাদেশের লাশ!" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁধে বহন করা মরদেহটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা করা কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের নয় বরং এটি ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের কান্কের জেলায় বিএসএফের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত এক মাওবাদী বিদ্রোহীর লাশ বহনের ছবি। গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ওই বন্দুকযুদ্ধে ২৯ জন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) সদস্য নিহত হয়েছিল।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে "Silence in air, bullet marks on trees at encounter site where 29 Naxals were killed" শিরোনামে গত ১৭ এপ্রিল ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম 'The Telegraph' এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৬ এপ্রিল ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের কান্কের জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর (বিএসএফ) সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ জন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী বিদ্রোহী) সদস্য নিহত হয়। অর্থাৎ ছবিটি ওই ঘটনায় নিহত কোনো ব্যক্তির লাশ বহনের। যদিও টেলিগ্রাফের এই প্রতিবেদনে মৃতদের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি নিহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি আছে কিনা সেটাও উল্লেখ নেই। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে নিহত মাওবাদীদের ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "ছত্তিশগড়ে ২৯ জন মাওবাদী নিহতের বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে" শিরোনামে 'বিবিসি বাংলা'র একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে বলা হয়, নিহতরা ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র সদস্য। ২০০৪ সালে জনযুদ্ধ আর এমসিসি দুই গোষ্ঠী মিলে সিপিআই (মাওবাদী) গঠিত হয়। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল নেপালের মাওবাদীদের। স্ক্রিনশট দেখুন--
উল্লিখিত প্রতিবেদনে ভারতের মাওবাদীদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও আলোচ্য পোস্টগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কথা উল্লেখ থাকলেও ঘটনাটি ঘটে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যে। বাংলাদেশ থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১,১১০ কিলোমিটার। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভারতের ছত্তিশগড়ে গত এপ্রিলে বিএসএফ এর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২৯ মাওবাদী বিদ্রোহীর মধ্যে একজনের লাশ বহনের ছবিকে সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশি নাগরিকের লাশ বহনের বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং ভিন্ন একটি ছবিকে বিএসএফের কাঁধে বাংলাদেশি নাগরিকের লাশের ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।