ইয়েমেন থেকে ভারতীয়দের বরখাস্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণাটি ভুয়া
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, পোস্টে উল্লেখিত ব্যক্তি একজন সাধারণ নাগরিক যার কোনো বিদেশী কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানোর এখতিয়ার নেই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ছবি পোস্ট করে ছবিটির বিবরণে দাবি করা হচ্ছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেন থেকে ভারতীয় সব শ্রমিককে বরখাস্ত করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৭ জুন 'Ainul Shawkat Bin Jinu' নামের একটি আইডি থেকে একটি পোস্ট করে বলা হয়,
"ইয়েমেন থেকে ভারতীয় সব শ্রমিককে বরখাস্ত করে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
__________________________
ইয়েমেনী শেখ আলী হাসসান আল জামল লিখেছেন- আমি আমার সব অমুসলিম ভারতীয় (হিন্দু ) শ্রমিকদের বরখাস্ত করেছি এবং তাদের সমস্ত বকেয়া অধিকার রিটার্ন টিকিটের সঙ্গে তাদের কাছে হস্তান্তর করেছি। আর আমি অনতিবিলম্বে ভারতে তৈরি সব পণ্যের লেনদেন ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে দেব।"
পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভাইরাল পোস্টগুলোতে উল্লেখিত নামের ব্যক্তি, শেখ আলী আল জামাল, একজন ইয়েমেনি নাগরিক। তিনি ইয়েমেনে অবস্থানরত ভারতীয়দেরকে সরকারিভাবে দেশে প্রেরণের ক্ষমতাশীল কেউ নন। আবার, পোস্টে ব্যবহৃত ছবির ব্যক্তিও আলাদা একজন যিনি প্রকৃতপক্ষ ইয়েমেনের মারিব প্রদেশের গভর্নর।
পোস্টে ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়, alialjamal1978 নামের একটি টুইটার একাউন্ট থেকে আরবী ভাষায় একটি পোস্ট করা হয়েছে। ছবিটি দেখুন--
ছবিতে থাকা Alialjamal1978 নামের সূত্র ধরে টুইটারে সার্চ করে একটি টুইটার একাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। একাউন্টটিতে খুঁজে পাওয়া যায় আলোচ্য পোস্টটি। আরবি ভাষায় লেখা টেক্সটকে গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, 'আমার কাছে সমস্ত অমুসলিম ভারতীয় শ্রমিকদের বসবাসের অনুমতিপত্র ছিল এবং আমি তাদের সমস্ত বকেয়া রিটার্ন টিকিটের সাথে হস্তান্তর করেছি। সেই সাথে আমি ভারতের সাথে লেনদেন এবং ভারতে তৈরি পণ্য ক্রয় বন্ধ করে দেবো।' টুইটার পোস্টটি দেখুন---
মূলত, আলি আল জামালের ওই পোস্টটিই ভুল বক্তব্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
নামের সূত্র ধরে আলি আল জামালের ফেসবুক একাউন্ট খুঁজে পাওয়া যায়। আলি আল জামালকে তার ফেসবুক একাউন্টে এ বিষয়ে আরবী ভাষাতে একটি পোস্ট করতে দেখা গেছে। গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি ওই পোস্টে পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, তিনি একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন এবং ক্ষমতাশীলদেরকে অনুপ্রাণিত করার জন্যে মূলত তিনি ওই পোস্টটি করেছিলেন। অর্থ্যাৎ, তার কাউকে চাকরিচ্যুত করার বা তার দেশ থেকে কাউকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে---
ছবি বিভ্রাট
আলি আল জামালের টুইটার ও ফেসবুক একাউন্টে একটি সাধারণ ব্যাপার পরিলক্ষিত হয়। তার দুটি সাইটের একাউন্টেই ফেসবুক পোস্টের ভাইরাল ছবির ব্যক্তির ছবি কাভার এবং প্রোফাইল ছবি হিসেবে সংযুক্ত আছে। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, ছবির ব্যক্তি ইয়েমেনের মারিব প্রদেশের গভর্নর মেজর জেনারেল সুলতান আল আরাদাহ। মারিব প্রদেশের ভেরিফায়েড সরকারী টুইটার একাউন্টে তার ছবি ও প্রশাসনিক অবস্থান উল্লেখ করে করা পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্ট দেখুন--
প্রকৃতপক্ষে আলি আল জামাল ইয়েমেনের একজন সাধারণ নাগরিক এবং তিনি মারিব প্রদেশের গভর্নর সুলতান আল আরাদার ছবি ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি ও টুইটারের হেডার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ফলে ওই ছবি থেকেই ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ঘটনাটি ঘটে।
অর্থ্যাৎ, একজন সাধারণ নাগরিক আলি আল জামালের পোস্টকে কেন্দ্র করে ইয়েমেনে অবস্থান করা ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা ও দেশে ফেরত পাঠানোর ভুয়া খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, ইয়েমেন থেকে ভারতীয়দের বরখাস্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।