ভিডিওর প্রাণীগুলোর নাম কোয়াটিস, ডায়নোসর নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, লম্বা লেজ বিশিষ্ট প্রাণী কোয়াটিসের দৌড়ানোর ভিডিওকে 'রিভার্স মুডে' দেখানোয় ডাইনোসর আকৃতির দেখাচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সমুদ্র সৈকতে এক দল খুদে ডাইনোসর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভিডিওতে ডায়নোসর সদৃশ কয়েকটি প্রাণীকে দৌড়ে যেতে দেখা যায়। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ৮ মে 'Gsm Ashadul' নামের একটি আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "সমুদ্র সৈকতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক দল খুদে 'ডাইনোসর!" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের ভিডিওটি 'রিভার্স মুডে' এডিট করে তৈরি করা। এছাড়াও, ভিডিওর প্রাণীটি ডাইনোসর নয় বরং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় দেখতে পাওয়া প্রসিওডিনি শ্রেণীভুক্ত একটি প্রাণী, যার নাম কোয়াটিস।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে সার্চ করে 'LADbible' নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে 'Coatis Backwards Look Like Dinosaurs' ক্যাপশনে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে লেখা হয়, "These coatis are a relative of the raccoon... but played backwards they become dinosaurs 🦕😂" (অর্থাৎ এই কোয়াটিসগুলো রেকুনের শ্রেণীভুক্ত প্রাণী... কিন্তু ভিডিওটি উল্টো করে চালালেই এগুলোকে দেখতে ডায়নোসরের মতন লাগে)। আলোচ্য ভাইরাল ভিডিওর প্রাণীগুলোর মত দেখতে কিছু প্রাণী খুঁজে পাওয়া যায় ওই পোস্টে। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
কোয়াটিস প্রজাতি সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা যায়, প্রাণীটি প্রসিওনিডি শ্রেণীভুক্ত এবং দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশে এই প্রাণীটির দেখা মেলে। এরা প্রসিওনিডি শ্রেণীভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। এই প্রাণীটিকে কোটিমুন্ডি বলেও ডাকা হয়। 'কোটিমুন্ডি' নামটি এসেছে ব্রাজিলিয়ান টুপিয়ান ভাষা থেকে। মূলত, ভাইরাল ভিডিওতে কোয়াটিস নামের প্রাণীদের ভিডিওটিকে রিভার্স মুডে নিয়ে অর্থ্যাৎ প্রযুক্তির সাহায্যে উল্টো করে দেখানো হয়েছে, যার ফলে প্রাণীগুলোকে দেখতে ডায়নোসরের মত লাগে। কোয়াটিস বা কোটিমুন্ডির ছবি সার্চ করে অনলাইন ফটোস্টকার ওয়েবসাইট alamy-তে কোটিমুন্ডির কিছু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন---
এবারে alamy ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া উপরের ছবি এবং ভাইরাল ভিডিওর প্রাণী মধ্যে তুলনামূলক সাদৃশ্য দেখুন--
এদিকে, আলোচ্য ভিডিওটি ভাইরাল হলে এই ভিডিওটির ফ্যাক্ট চেক করে ভারতীয় বাংলা গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা। ওই প্রতিবেদনে আনন্দবাজার আলোচ্য ভিডিওটিকে রিভার্স মুডে চালিয়ে প্রমাণ করেছে, কিভাবে ভিডিওটি এডিট করে বিভ্রান্তিকর দাবিতে ভাইরাল করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, আলোচ্য ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এর ফ্যাক্ট চেক করেছে India Today এবং NDTV। ভিডিওটি ঠিক কোন স্থানে ধারণ করা সেটা জানা না গেলেও, এসব ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করা হয়েছে, কোয়াটিস নামের প্রাণীর দৌড়ানোর প্রকৃত ভিডিওটিকে রিভার্স মুডে এডিট করে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং লম্বা লেজ বিশিষ্ট প্রাণী কোয়াটিসের দৌড়ানোর ভিডিওকে রিভার্স মুডে এডিট করে সেটিকে ডায়নোসর বলে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।