কর্ণাটকে হিজাব আন্দোলনকারী মুসকানের ভিডিও দিয়ে তাবাসসুমের খবর প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, কর্ণাটকের দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রথম হওয়া তাবাসসুম এবং হিজাব আন্দোলনকারী মুসকান ভিন্ন ব্যক্তি।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব আন্দোলনের সেই তাবাসসুম সাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন, খবরের সাথে হিজাব আন্দোলনের সে সময়ের ভাইরাল হওয়া "আল্লাহু আকবর" স্লোগান দেয়া এক শিক্ষার্থীর ভিডিও প্রচার করা হয়। বলা হচ্ছে সেই স্লোগান দেয়া মেয়েটিই তাবাসসুম সাইক। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৬ এপ্রিল নাগরিক টিভির ফেসবুক পেজে একটি সংবাদ ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "সেই হিজাব আন্দোলনের তাবাসসুম দ্বাদশের পরীক্ষায় কর্ণাটকে প্রথম #karnataka #SupremeCourt #হিজাব #NagorikTV #exams"। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী অন্যতম হিজাব আন্দোলনকারী তাবাসসুম সাইক, যার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অপরদিকে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে গেরুয়া উত্তরীয় পরা ছাত্রদের 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানের বিপরীতে 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি তোলা হিজাব আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর নাম বিবি মুসকান খান। মুসকানের ভিডিও দিয়ে অপর হিজাব আন্দোলনকারী তাবাসসুমের দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার খবর প্রচার করা হচ্ছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস্ অব ইন্ডিয়ায় ২০২২ সালের ১৬ মার্চ "Karnataka HC's decision on hijab: Mandya girl Muskan Khan who held her own against saffron-clad boys silent" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তা থেকে জানা যায়, কর্ণাটকে কলেজ ক্যাম্পাসে গেরুয়া উত্তরীয় পরা ছাত্রদের 'জয় শ্রীরাম' স্লোগানের প্রতিবাদে 'আল্লাহু আকবর' ধ্বনি তুলে আলোচনায় আসা শিক্ষার্থী বিবি মুসকান খান ব্যাচেলর অব কমার্স (BCom) এর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অর্থাৎ অন্তত দুই বছর আগেই তিনি দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করে ফেলেছেন। ওই প্রতিবেদেনে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময়ে মুসকানের একটি ফাইল ফটো যুক্ত করা হয়। টাইম্স অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
আবার জি নিউজে প্রকাশিত "Who is Muskan Khan - the poster girl of hijab protest; all that is known about her" শিরোনামের একটি প্রতিবেদন থেকে মুসকান খানের পড়াশোনা সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অন্যদিকে, ভারতেরই আরেকটি গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওয়েবসাইটে "‘I chose education over hijab… will need to make some sacrifices,’ says Karnataka II PUC topper" শিরোনামের আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তাবাসসুম নামে কর্ণাটক রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকারী ওই শিক্ষার্থী কলা বিভাগের শিক্ষার্থী। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া এ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে তাবাসসুম সাইকের মা-বাবার সাথে একটি ছবি সহ গত ২৫ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব আন্দোলনের সেই তাবাসসুম সাইক দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন। মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৭ বছরের এই কিশোরী ৫৯৩ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন। এতে আরো বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারিতে কর্ণাটকের উদিপি জেলায় এক স্কুলে হঠাৎ হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। কর্তৃপক্ষ ফরমান জারি করে, হিজাব বা ওই ধরনের কোনো ধর্মীয় পোশাক পরে ক্লাস করা যাবে না। রাজ্যে হিজাব বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন তাবাসসুম ও তাঁর অন্য পাঁচ বান্ধবী বেঙ্গালুরুর স্কুলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপর বাবা মা ও বড় ভাইয়ের পরামর্শে তিনি একদিন মন বদলান এবং স্কুলে যাওয়া শুরু করেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত মা-বাবার সাথে তাবাসসুম সাইকের দেখুন--
অর্থ্যাৎ, বিষয়টি স্পষ্ট যে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হিজাব আন্দোলনকারী তাবাসসুম সাইক ও আরেক হিজাব আন্দোলনকারী বিবি মুসকান খান একই ব্যক্তি নন।
সুতরাং ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় কলা বিভাগ থেকে প্রথম হওয়া তাবাসসুম সাইকের খবরের সাথে ভুলভাবে হিজাব আন্দোলনকারী মুসকান খানের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।