StopNCII ইন্টারনেটে থাকা সব ছবি সরিয়ে দিতে সক্ষম নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, StopNCII শুধু তাদের অংশীদার ওয়েবসাইটগুলোতে আপলোডকৃত ছবি সরাতে সেই ওয়েবসাইটগুলোকে সুপারিশ করতে পারে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক গ্রুপে StopNCII নামে একটি ওয়েবসাইটের কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, যদি কেউ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই'য়ের সহায়তায় কারো নগ্ন ছবি তৈরি করে তাহলে ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে আসল ছবি এবং এডিটেড ছবি জমা দিলে ইন্টারনেটের সব জায়গা থেকে ছবিটি সরিয়ে ফেলা হবে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৫ মার্চ ‘মহাকাশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে 'M Ahmed Mahi' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "যদি কেউ AI বা ফটোশপ দিয়ে আপনার ছবি এডিট করে nude ছবি তৈরি করে তাহলে আপনি stopncii ওয়েবসাইটে গিয়ে আসল ছবি আর এই এডিটেড ছবি জমা দিবেন, তাহলেই তারা ইন্টারনেট এর যত জায়গায় এই এডিটেড ছবি আছে তা সরিয়ে দিবে। এর জন্য আপনার কারো সাথে সরাসরি কথা ও বলা লাগবে না। নিজের পরিচয় ও গোপন থাকবে।" উক্ত ফেসবুক পোস্টে যুক্ত করা একটি ফটোকার্ডেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। StopNCII ইন্টারনেটের সব জায়গা থেকে ছবি সরিয়ে নিতে পারে না বরং তাদের অংশীদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকা নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে থাকা ছবি সরিয়ে দিতে সেই ওয়েবসাইটকে সুপারিশ করতে পারে।
শুরুতেই StopNCII এর ব্যাপারে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে StopNCII-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে জানা যায়, StopNCII মূলত রিভেঞ্জ পর্ন হেল্পলাইনের একটি প্রজেক্ট। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা সাউথ ওয়েস্ট গ্রিড ফর লার্নিং (SWGFL) ২০১৫ সালে রিভেঞ্জ পর্ন হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের প্রাপ্ত অভিযোগের প্রায় ৯০ শতাংশ তথা দুই লক্ষ ছবি সরিয়েছে তারা। মূলত অংশীদার প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের সাথে কাজ করে StopNCII. স্ক্রিনশট দেখুন--
StopNCII এর ওয়েবসাইটেই তাদের কাজের পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। StopNCII এর কাজ মোট ছয়টি ধাপে সম্পন্ন হয়। ব্যক্তির ডিভাইসে ছবি বাছাইয়ের পরে নগ্ন ছবি থাকলে সেটির একটি ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা হ্যাশ তৈরি করা হবে যা ব্যক্তির ফোন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে। এক্ষেত্রে StopNCII-এর ওয়েবসাইটে কোনো ছবি বা ভিডিও আপলোড করতে হবে না। ওই হ্যাশের সাথে কোনো ছবি মিলে গেলে সেই ছবি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে ছবিটি সরিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি ছবি সরিয়ে ফেলা হলেও পরবর্তীতে আবার সেই ছবি আপলোড হয় কি না সেদিকেও নজর রাখবে ওয়েবসাইটগুলো। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, ওয়েবসাইটটির FAQ বিভাগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক, বাম্বলের সাথে অংশীদার হয়ে কাজ করে StopNCII. শুধু অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোই এই প্রযুক্তির সাহায্যে কাজ করতে পারবে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ইন্টারনেটের সব ওয়েবসাইট থেকে ছবি সরিয়ে ফেলার সক্ষমতা StopNCII-এর নেই বরং সুনির্দিষ্ট কয়েকটি ওয়েবসাইটের সাথে তারা অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। এছাড়াও, StopNCII ইন্টারনেটের কোনো ছবি সরাসরি নিজে সরাতে পারে না বরং তাদের অংশীদার ওয়েবসাইটগুলোতে থাকা ছবির সাথে হ্যাশ মিলে গেলে নগ্ন ছবি সরাতে সুপারিশ করতে পারে।
সুতরাং StopNCII আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা তৈরি নগ্ন ছবি ইন্টারনেটের সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলতে পারে বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, তা সঠিক নয়।