ছবিটি সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা সাঈদীর নয়
ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৮ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনীর হাতে আটক চার রাজাকারকে জনসম্মুখে হত্যা করার আগ মুহুর্তে তোলা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে দৈনিক সংবাদের ক্যাপশনযুক্ত করা একটি ছবিতে লাল বৃত্তে এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদ প্রকাশিত ছবি। পিরোজপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও যৌথবাহিনী রাজাকার দেলু সিকদারকে আটক করে। যিনি বর্তমানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী নামে পরিচিত। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৫ আগস্ট Md Shahjahan Alam Saju নামের একটি আইডি থেকে একটি সংবাদপত্রের নিউজ কাটিংয়ে দৈনিক সংবাদের ক্যাপশন যুক্ত করা একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করে, ‘‘প্রমাণের নথিতে আটককৃত রাজাকার দেলু সিকদার(বর্তমানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী), মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না,তবে ১৯৭১ সালের কিছু আলামত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আছে সেইটা তো বলতেই হয়। যারা ওনার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন আমাদের মা বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে যে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। প্রমান সহকারে ১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দৈনিক সংবাদ প্রকাশিত ছবি প্রথমে নাম ছিল আটককৃত রাজাকার দেলু সিকদার(বর্তমানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ) স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা চোখ থেকে ও যারা অন্ধদের মতো চলে, থাকে তারা বলে কুরআনের পাখি। সে যে অপকর্ম করে মা বোনের ইজ্জত নিয়েছে সেই টার জন্য ও বলেন( মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন কারি পাখি)।” নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশর্ট দেখুন---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ছবিতে সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উপস্থিত থাকার দাবিটি ভিত্তিহীন। ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষে মুক্তিবাহিনীর হাতে আটক রাজাকারদের জনসম্মুখে হত্যা করার আগ মুহুর্তে তোলা বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আলোচ্য ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে Prisoners' Last Moments শিরোনামে গেটি ইমেজের ওয়েবসাইটে আসল ছবিটি পাওয়া যায়। ছবির ওই ক্যাপশনে লেখা হয়, Guerrilla fighters of the pro-independence Mukti Bahini forces preparing to torture and execute four men accused of being members of the pro-Pakistani Razakar paramilitary force, at a political rally in Dhaka, Bangladesh, two days after the Pakistani surrender at the end of the Bangladesh War of Independence, 18th December 1971. Three of the prisoners were bayoneted to death by Mukti Bahini leader, Abdul Kader Siddique. Siddique went on to a career in Bangladeshi politics. Original Publication: Catalogue 1 - Modern War - MW.11 (Photo by William Lovelace/Daily Express/Hulton Archive/Getty Images). (স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুই দিন পর ঢাকায় এক রাজনৈতিক সমাবেশে পাকিস্তানপন্থী রাজাকার হিসেবে অভিযুক্ত চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর নেতা আব্দুল কাদের সিদ্দিকের হাতে বন্দীদের মধ্যে তিনজনকে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সিদ্দিকী পরে বাংলাদেশে রাজনীতি করেন। মূল প্রকাশনা: ক্যাটালগ ১- আধুনিক যুদ্ধ- MW.11 (ছবি উইলিয়াম লাভলেস/ডেইলি এক্সপ্রেস/হাল্টন আর্কাইভ/গেটি ইমেজ)। স্ক্রিনশর্ট দেখুন--
একইভাবে সার্চ করে AP এর ওয়েবসাইটে "AP Photos: Bangladesh celebrates 50 years of independence" শিরোনামে একই ব্যক্তিদের হত্যা করার আগ মুহুর্তের আরেকটি ছবি পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, In this Dec. 18, 1971, file photo, soldiers of the Mukti Bahini, the military arm of Bangladesh, standing and three among four men who were to be executed, sitting, raise their palms in Islamic prayer in Dacca, Bangladesh. The four men were executed publicly witnessed by some five thousand people including children. Bangladesh is celebrating 50 years of independence this year. (AP Photo/Horst Faas, File) অর্থাৎ ফাইল ফটো- এই ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগ মুহুর্তে চারজনের মধ্যে তিনজন বসে আছেন। ইসলাম ধর্মানুসারে তারা হাত তুলে প্রার্থনা করছেন। শিশুসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের সামনে এই চারজনকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ এ বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। (ছবিটি তুলেছেন এপি'র ফটোগ্রাফার হর্স্ট ফাস)। নিচে স্ক্রিনশর্ট দেখুন--
অর্থাৎ ছবিটিতে দৃশ্যমান ব্যক্তিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়ক রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর তাদেরকে আটক করে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। তাই এই ব্যক্তিদের কেউ সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হওয়ার দাবিটি বাস্তবসম্মত নয় বা সঠিক নয়।
উল্লেখ্য গত ১৪ আগস্ট জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাবন্দী অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে তিনি আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন।
সুতরাং ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর হাতে আটক ও পরে নিহত হওয়া রাজাকারদের ছবিটি পোস্ট করে, তন্মধ্যে একজন সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা সাঈদী বলে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা সঠিক নয়।