ব্যারিস্টার সুমনের মামলায় ক্রিকেটার সাকিবের কারাদণ্ড হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০১৯ সালে ভিন্ন ঘটনায় ব্যারিস্টার সুমনের দেওয়া বক্তব্যের খণ্ডাংশ বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচারিত হচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বক্তব্য রাখার একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ব্যারিস্টার সুমনের করা মামলায় কারাগারে আছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৪ জানুয়ারি 'Amdadul 10' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'সুমন ভাই' নামের একটি আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "ব্রেকিং নিউজ """বাচার উপায় নেই সাকিবের!! ব্যারিস্টার সুমনের করা মামলায় কারাগারে সাকিব"। ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার সুমনকে বলতে দেখা যায়, "এটাই আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। আদালত তার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উনি ৮ বছর জেলে থাকবেন এবং ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিবেন"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ব্যারিস্টার সৈয়দুল হক সুমনের করা একটি মামলার রায় প্রকাশের পরে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন তিনি। উক্ত বক্তব্যের খণ্ডাংশ সাকিব আল হাসানের সাথে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ থেকে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা কিংবা সাকিব আল হাসানের কারাদণ্ড হওয়ার কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর "এ রায় সব থানার ওসিদের জন্য একটা 'অশনি সংকেত': ব্যারিস্টার সুমন" শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওটির শুরু থেকেই ব্যারিস্টার সুমনকে বলতে দেখা যায়, "এটাই আমার সবচেয়ে বড় সফলতা। আদালত তার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। উনি ৮ বছর জেলে থাকবেন এবং ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিবেন। সেটা দিবেন নুসরাতের পরিবারকে। আর জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছর জেল হবে"। আলোচ্য ভিডিওটিতেও উক্ত বক্তব্যের প্রথম অংশটি বলতে শোনা যায়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এর সূত্র ধরে সার্চ করে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনলাইন ভার্সনেও ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর "এ রায় সব থানার ওসিদের জন্য একটা 'অশনি সংকেত': ব্যারিস্টার সুমন" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ব্যারিস্টার সুমন। ওই মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে সন্তোষ জানিয়ে এসময় বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার সুমন। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের পরে ২০১৯ সালে ধারণ করা হয়। ভিডিওটির সাথে সাকিব আল হাসানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
উল্লেখ্য গত বছরের মার্চে ব্যারিস্টার সুমন দাবি করেন, হোটেল সোনারগাঁওয়ে সাকিব আল হাসান তাকে দেখে মারতে এসেছিলেন। তবে সার্চ করে ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষ থেকে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা কিংবা সাকিব আল হাসানের কারাগারে যাওয়ার কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং ভিন্ন একটি মামলার রায়ের পর ব্যারিস্টার সুমনের দেওয়ার বক্তব্যের ভিডিওর খণ্ডাংশ প্রচার করে ব্যারিস্টার সুমনের করা মামলায় সাকিব আল হাসানের কারাগারে যাওয়ার অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।