খালেদা জিয়ার পুনরায় জেলে যাওয়ার ভুয়া খবর প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ক্যাপশনে খালেদা জিয়ার পুনরায় জেলে যাওয়ার খবর প্রচার করা হলেও বিষয়বস্তুতে এরকম কোনো তথ্য নেই।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হয়েছে। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২ ডিসেম্বর 'Bangla TV' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "আবারও জেলে খালেদা জিয়া!রাজশাহীতে বিএনপির তুফান শুরু"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
অর্থ্যাৎ ওই পোস্টে দাবী করা হচ্ছে যে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আবার জেলে পাঠানো হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে করা দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর কথা লেখা থাকলেও ভিডিওটির ভিতরে কোথাও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সংযুক্ত ভিডিওটি টেলিভিশন সংবাদের আদলে তৈরি করা। ভিডিওটির ২০-২৫ সেকেন্ডে সংবাদের হেডলাইন হিসেবে বলা হয়, "খালেদা জিয়া সমাবেশে গেলে দরখাস্ত মিথ্যা প্রমাণিত হবে, বলছেন আইনমন্ত্রী মন্ত্রী"। পরে ভিডিওটির ৪ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে বলা হয়, "খালেদা জিয়া বিএনপির সমাবেশে গেলে দরখাস্ত মিথ্যা প্রমাণিত হবে, বলেছেন আইনমন্ত্রী মন্ত্রী। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশে খালেদা জিয়া গেলে তাঁর দরখাস্তের লেখা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান বার ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, জেলে থাকাকালীন খালেদা জিয়ার পরিবার থেকে দরখাস্ত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার শরীর অত্যন্ত খারাপ। যে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে যাতে জেল থেকে ছাড়া হয়, সেই প্রার্থনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় ৪০১ ধারায় তাঁর দন্ডাদেশ স্থগিত রেখে দুটি শর্তে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত, আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে বেল দেননি, তাকে মুক্ত করা হয়েছে। আনিসুল হক বলেন, 'ওনারা বলেছেন ডিসেম্বরের ১০ তারিখে ওনাকে (খালেদা জিয়াকে) দিয়ে বক্তৃতা দেওয়াবেন। যে দুটি শর্তে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, ওই দুটি শর্তে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না—এটা নেই। কিন্তু ওনাদের যে আবেদন ছিল, তাঁর শারীরিক অবস্থা এতো খারাপ, তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসা করাতে হবে। তাহলে যদি খালেদা জিয়া ১০ তারিখে যান, তাহলে ওই যে দরখাস্ত, যে লেখা ছিল সেটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে না?" তবে পুরো ভিডিওটির মধ্যে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো সংক্রান্ত কোনো তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ২ ডিসেম্বর 'খালেদা জিয়া বিএনপির সমাবেশে গেলে দরখাস্ত মিথ্যা প্রমাণিত হবে: আইনমন্ত্রী' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে আলোচ্য ভিডিও থেকে প্রাপ্ত আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের মত হুবহু বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও নানাভাবে সার্চ করেও জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে পুনরায় গ্রেফতার বা জেলে পাঠানোর কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে, অনুসন্ধানে দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে "বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে খালেদাকে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবো: শেখ হাসিনা" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।" তবে, ওই প্রতিবেদনের কোথাও খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে এমন কথা বলা হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে গত ২ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী সমাবেশ চলছে, সকালে মাঠ খুলে দিয়েছে পুলিশ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওইদিন বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বিএনপির শেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ হয়েছে।
তবে, বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান চালিয়েও খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে এরকম কোন সংবাদ জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং আইনমন্ত্রীর ভিন্ন বক্তব্য প্রচার করে ভিডিওর শিরোনামে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে এরকম চটকদার ভিত্তিহীন তথ্য লিখে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।