'স্যাটায়ার' এর নামে বিভ্রান্তিকর খবর পরিবেশন
মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে হুবহু কপি-পেস্ট করে তাতে অনুমানভিত্তিক তথ্য যোগ করে খবর হিসেবে পুনরুৎপাদন করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে একটি খবর ছড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ নাকি "অতি শীঘ্রই বন্ধ পাবজি, ফ্রি ফায়ার সহ চীনা ২০ টি অ্যাপ" বন্ধ করতে যাচ্ছে।
www.bengalisarcasm.com নামে একটি ওয়েবসাইটে ৬ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় যার শিরোনাম, "বাংলাদেশে অতি শীঘ্রই বন্ধ হতে যাচ্ছে পাবজি,ফ্রি ফায়ার সহ চীনা ২০ টি অ্যাপ"।
আর্কাইভ করা আছে এখানে।
www.bengalisarcasm.com এর এই প্রতিবেদন আরও কিছু অনলাইন পোর্টালেও পুনরুপাদিত হয়েছে।
সাধারণত স্যাটায়ারমূলক লেখা প্রকাশকারী ওয়েবসাইটটির এই প্রতিবেদনের পুরোটা জুড়ে ভারত সরকার কর্তৃক ২৭৫টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার খবর দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটির একদম শেষের প্যারাটি ছাড়া বাকিটুকু দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইনে প্রকাশিত "ভারতে বন্ধ হচ্ছে পাবজি, লুডো ওয়ার্ল্ড" শীর্ষক প্রতিবেদনের হুবহু কপি।
ইত্তেফাকের প্রতিবেদন এখানে আর্কাইভ করা আছে।
শেষ প্যারায় লেখা হয়েছে--
"এবার ভারতের মতো বাংলাদেশে শোনা যাচ্ছে এসব গেম বন্ধের তোড়জোড়।নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় এবং সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার পেছনে এসব গেমের অন্যতম কারন বলে দাবী করছে কেউ কেউ। অভিভাবকরা নিজেরা ও যাচ্ছেন এইসব গেইম যাতে বন্ধ হয় সেজন্যে তারা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন ।নিজের সন্তানের ভবিষতের কথা চিন্তা করে হলেও তারা যাতে এসব গেম বন্ধ করে দেয় বলে অনুরোধ করেছেন কেউ কেউ।"
www.bengalisarcasm.com এর ওয়েবসাইটের নিচে ডিসক্লেইমারে লেখা রয়েছে-
"All the content in BengaliSarcasm is created for your fun and entertainment purposes only. You are requested not to take any of our content seriously."
কিন্তু আলোচ্য প্রতিবেদনের শুরুতে বা শেষে কোথাও কোনো ডিসক্লেইমার নেই। এর ফলে প্রতিবেদনটিকে অনেকে সত্য ধরে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন।
বিভ্রান্ত হওয়া তেমন কিছু পাঠকের মন্তব্য দেখুন নিচের স্ক্রিনশটে--
লক্ষ্যণীয়, উপরের স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে 'Bengali Sarcasm' নামক ওয়েবসাইটের ফেসবুক পেইজে "বাংলাদেশে অতি শীঘ্রই বন্ধ হতে যাচ্ছে পাবজি,ফ্রি ফায়ার সহ চীনা ২০ টি অ্যাপ" শিরোনামের প্রতিবেদন পোস্ট করার পর পাঠকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে পেইজের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, "ভেতরের নিউজ না পড়ে হুদাই বলদের মতো গালাগালি করবেন না। যারা চালাক তারা ঠিকই বুঝবেন।"
ফেসবুকে শেয়ার করার লিংকে ক্লিক করলে ওয়েবসাইটে গিয়ে শিরোনাম দেখা যায় বদলে দেয়া হয়েছে। ভেতরের শিরোনামে যোগ করা হয়েছে 'না' শব্দটি। দেখুন তুলনামূলক নিচের স্ক্রিনশটে--
অর্থাৎ, প্রথমে 'না' ছাড়াই শিরোনাম করে ফেসবুকে শেয়ারের পরে যখন বিতর্ক উঠেছে তখন ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন এডিট করে 'না' যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ফেসবুকের প্রতিবেদনে আগের মতো 'না' বিহীন শিরোনামই এখনও আছে। শুধু ফেসবুকে শেয়ার করা প্রতিবেদনটি যারা দেখেছেন এবং লিংকে ক্লিক করেননি তারা 'না' শব্দটি দেখতে পাননি। ফলে তারা ভুল তথ্য পেয়েছেন, এবং পাচ্ছেন।
আবার যারা শেয়ার করা শিরোনাম দেখে ক্লিক করে প্রতিবেদনে ঢুকে নতুন করে ওয়েবসাইটের শিরোনাম পড়েননি তারা পুরো প্রতিবেদন পড়ে ভারতের একটি সঠিক খবরের শেষাংশে 'শোনা যাচ্ছে' 'দাবি' অজ্ঞাত 'অভিভাবকদের অনুরোধ' ইত্যাদির শব্দের বরাতে বাংলাদেশে বিভিন্ন অ্যাপ বন্ধের 'সম্ভাবনা'কে 'স্যাটায়ার' নয়, বরং 'খবর' হিসেবেই গ্রহণ করেছেন।
মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে হুবহু কপি-পেস্ট করে পুনরুৎপাদন করা এবং তার সাথে 'শোনা যাচ্ছে'র বরাতে নতুন ভুল তথ্য যোগ করা, সামাজিক মাধ্যমে এক শিরোনামে পোস্ট করা এবং ওয়েবসাইটে তার সম্পূর্ণ বিপরীত শিরোনাম দেয়া- এসব কাজকে 'স্যাটায়ার' বলে দাবি করাও বিভ্রান্তিকর।
অর্থাৎ, www.bengalisarcasm.com আলোচ্য প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তিতে ভরা। বিশেষ করে বর্তমানে ফেসবুকে থাকা 'না' বিহীন শিরোনামের পোস্টটি আরও বেশি বিভ্রান্তিকর।