এই ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাননি সাকিব আল হাসান
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০২০ সালে ভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে লাইভে এসে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন সাকিব আল হাসান।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসান। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৩ জানুয়ারি 'Binodon Tv / বিনোদন টিভি' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "সুমন ভাই আমাকে মাফ করে দিন বললেন সাকিব আল হাসান।"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, ২০২০ সালে সাকিব আল হাসান কলকাতায় পূজা উদ্বোধন করতে গেছেন- এরকম একটি দাবি ছড়িয়ে পড়লে লাইভে এসে সেই ঘটনার ব্যাখ্যা দেন তিনি। ওই ভিডিওটি থেকে খণ্ডিত ক্লিপ নিয়ে জোড়া লাগিয়ে আলোচ্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, সমগ্র ভিডিওটিতে সাকিব আল হাসানকে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়নি।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর "বিতর্কের জবাবে ক্ষমা চাইলেন সাকিব" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচ্য ভিডিওটির মত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "বেনাপোল বন্দর হয়ে কলকাতায় যাওয়ার পথে সাকিব এক ভক্তের মুঠোফোন ছুড়ে ফেলেছিলেন, আছে এমন অভিযোগও। এটারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার, ‘যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে, তার ফোনটা কখনোই ইচ্ছেকৃতভাবে ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি আছে, সেটা মেনে চলার চেষ্টা করছিলাম। কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রেখে চলা যায়, সেটা চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু অনেক মানুষ ছিল এবং ভিড় ছিল, সবাই চেষ্টা করছিল ছবি তুলতে। আমিও চেষ্টা করছিলাম কীভাবে তাদের কাছে না গিয়ে আমার কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে পারি ইমিগ্রেশনের। একজন একদম আমার শরীরের ওপর দিয়ে এসে ছবি তুলতে চায়। আমি তাকে সরিয়ে দিতে গেলে তার হাতের সঙ্গে আমার হাত লেগে ফোনটি পড়ে যায়। পরে হয়তো ভেঙেও যায়। তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয়, তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। এই করোনার সময়ে সবারই সেটা করা উচিত।’" আলোচ্য পোস্টের ভিডিওতে দেখানো সাকিব আল হাসানের বক্তব্যের সাথে উক্ত ভিডিওটির বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া, প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত ভিডিওটিতে দৃশ্যমান সাকিবের পোশাক, স্টাইল ও ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে আলোচ্য ভিডিওটির সবকিছুর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে সার্চ করে সাকিব আল হাসানের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর অর্থাৎ ৩ বছর আগে পোস্টকৃত আলোচ্য ভিডিওটির অরিজিনাল ও দীর্ঘ ভার্সন খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, ওই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে সাকিব আল হাসানকে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়নি। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
এছাড়াও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির অনলাইন ভার্সনেও এই একই ভিডিও একই দাবিতে খুঁজে পাওয়া যায়।
এদিকে সাকিব আল হাসান তাকে মারতে এসেছিলেন বলে গত বছরের মার্চে অভিযোগ তোলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সম্প্রতি সেই ঘটনা নতুন করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর আলোচ্য ভিডিওটি তিন বছর আগের ২০২০ সালের।
অর্থাৎ সাকিবের আলোচ্য ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার একটি পুরোনো ভিডিও। এটি ব্যারিস্টার সুমনের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
সুতরাং সাকিব আল হাসানের ৩ বছর আগে ভিন্ন ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার ভিডিওকে সম্প্রতি ব্যারিস্টার সুমনের কাছে তার ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।