লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ করেনি সৌদি আরব
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, সৌদি আরব সরকার লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা জারি করেনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে দাবি করা হচ্ছে, লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ এবং একই সাথে মসজিদের ভিতরে ইফতার খাওয়া নিষিদ্ধ করেছে সৌদি আরব সরকার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি 'Hindu Soldiers' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ !! মসজিদের ভিতর ইফতার নয়, এ বছর রমজানেও সৌদিতে নিয়মের বেড়াজাল ? বিস্তারিত কমেন্টে👇।"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ড. আব্দুল লতিফ বিন আব্দুল আজিজ আল শেখ দেশটির সব মসজিদে আজান দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চারটি লাউডস্পিকার ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। এছাড়া, ইফতারের সময় মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনের তত্ত্বাবধায়নে মসজিদ চত্বর বা আঙিনায় ইফতার করা যাবে বলেও জানানো হয়।
দাবিটির উৎস:
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ! মসজিদের ভিতর ইফতার নয়, এ বছর রমজানেও সৌদিতে নিয়মের বেড়াজাল?" শিরোনামে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলা ভার্সন 'এই সময়' এর ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে কোনো ধরণের সূত্র ছাড়াই দাবি করা হয়, "২০২৩ সালে সৌদি আরবের ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রক রমজান নিয়ে নয়া নিয়ম জারি করে। রমজান চলাকালীন মসজিদে লাউডস্পিকার বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ইফতারও আর সম্প্রচারিত হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। মসজিদে কোনও চাঁদা বা অনুদান গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মসজিদের অন্দরে সূর্যাস্তের পর ইফতার পালন করায় নিষেধাজ্ঞা আরপ করা হয়।" স্ক্রিনশট দেখুন--
সৌদি আরব সরকারের নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে:
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি টুইটার একাউন্টে ২০২৩ সালের একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টে দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তিতে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ ধারায় মসজিদে ক্যামেরা স্থাপনের উপর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করে যাতে নামাজরত অবস্থায় থাকা ইমাম এবং প্রার্থনাকারীদের ছবি তোলা না হয় এবং কোন ধরনের মিডিয়াতে যাতে নামাজের সময় তোলা ছবি পাঠানো বা প্রচার করা না হয়। কিন্তু লাউডস্পিকারে আজান দেওয়ার উপর কোন নিষেধাজ্ঞা সেখানে পাওয়া যায়নি। ৯ নং নির্দেশনায় বলা হয়, দেশটিতে রমজানে রোজাদারদের জন্য মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের তত্ত্বাবধানে মসজিদের আঙিনা বা চত্বরে ইফতারের আয়োজন করা যাবে। তবে ইফতার শেষ হওয়ামাত্র মসজিদের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। পোস্টটি দেখুন--
His Excellency the Minister of Islamic Affairs #Dr_Abdullatif_Al_Alsheikh issued a circular to all branches of the Ministry of the need to prepare mosques to serve the worshipers, as part of the Ministry's preparations to receive the Holy Month of #Ramadan 1444AH. pic.twitter.com/uTSJ0Jc5JE
— Ministry of Islamic Affairs 🇸🇦 (@Saudi_MoiaEN) March 3, 2023
এছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে "Iftar fundraising banned at Saudi mosques" শিরোনামে গালফ নিউজের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়। সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদনে বলা হয়, "মিনিস্ট্রি অব ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মসজিদের পবিত্রতা রক্ষায় মসজিদের ভেতর নামাজের জায়গায় ইফতার আয়োজন করা যাবে না। এর পরিবর্তে মসজিদের আঙিনা বা চত্বরে ইফতারের আয়োজন করা যাবে। এছাড়া কোনো মাধ্যমে নামাজের ভিডিও সম্প্রচার করা যাবে না।"। তবে প্রতিবেদনটির কোথাও সৌদি আরবে লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
যদিও কি-ওয়ার্ড সার্চ করে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেটে "Saudi Arabia limits external loudspeakers in mosques" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দেশটিতে মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার প্রসঙ্গে সরকারি নির্দেশনা বিষয়ে বলা হয়, "সৌদি আরবের ইসলামবিষয়ক মন্ত্রী ড. আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আল শায়েখ মসজিদে আজানের জন্য ব্যবহৃত বাইরে লাগানো লাউডস্পিকারের (মাইক) সংখ্যা চারে নামিয়ে আনতে বলেছেন। তিনি যেসব মসজিদে বাইরে চারটির বেশি মাইক লাগানো রয়েছে সেগুলো নামিয়ে পরবর্তী ব্যবহারের জন্য গুদামে সংরক্ষণ করতে অথবা যেসব মসজিদে পর্যাপ্ত মাইক নেই সেখানে বিতরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ সৌদি আরবের মসজিদে লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ এবং মসজিদে ইফতার আয়োজনে কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি।
সুতরাং সৌদি আরবের মসজিদে লাউডস্পিকারে আজান নিষিদ্ধ এবং মসজিদে ইফতারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে ফেসবুকে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।