ভারতের স্যাটায়ার ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুর বেহাল রাস্তার প্রতি পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ, প্রোফাইল এবং গ্রুপে একটি ভিডিও পোস্ট করে, বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চাঁদে নভোচারী পাঠালো। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৪ আগস্ট 'নিবু-দা' নামের একটি পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, "বাংলাদেশ প্রথমবারের মত চাঁদে নভোচারী পাঠালো, অভিনন্দন বাংলাদেশ। সিকিউরিটির কারণে গোপন রাখা হলেও ফুটেজটি লিক হয়েছে। বাংলাদেশের অলিতেগলিতে এমন নভোচারী থাকবে একদিন ❤❤❤ #MoonLandingBangladesh…"। ভিডিওর প্রাথমিক অংশে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি মহাকাশচারীদের ন্যায় পোশাক পরে ধীরে ধীরে পা ফেলে হাঁটছেন। পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি মহাকাশচারীদের ন্যায় পোশাক পরে ধীরে ধীরে পা ফেলে হাঁটছেন। একদম স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে এবং সম্পূর্ণ ভিডিওটি না দেখলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এটিকে মহাকাশ সংশ্লিষ্ট ভিডিও ভেবে ভুল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, ভিডিওগুলোর ক্যাপশনে বাংলাদেশের ভিডিও দাবি করা এবং স্যাটায়ার ডিসক্লেইমার না থাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
যদিও সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখলে এর শেষাংশে মহাকাশচারীদের পোশাক পরে হাঁটা ব্যক্তিটির পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায় এবং ভিডিওটি কোনো একটি রাস্তায় ধারণ করা তা বোঝা যায়। তবে পুরো ভিডিওটি দেখার পরও এটি বাংলাদেশের রাস্তায় ধারণ করা নাকি ভিন্ন কোনো দেশে ধারণ করা তা বোঝার উপায় নেই।
ফেসবুকে আলোচ্য দাবি সহ ভিডিওটির প্রাথমিক সূত্রপাত সম্পর্কে যা জানা যায়:
অনুসন্ধানে "Shanjidul Alam Seban Shaan" নামক একটি ফেসবুক প্রোফাইলে "বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চাঁদে নভোচারী পাঠালো" শীর্ষক শিরোনামের কি-ওয়ার্ডে আলোচ্য ভিডিওটি সহ ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। চার বছর আগের এই পোস্টটিতেও ক্যাপশনে কোথাও কোনো ডিসক্লেইমার দেওয়া নেই। সম্প্রতি গত ২৪ আগস্ট পোস্টদাতা কমেন্ট বক্সে "এইটা ভারতের ভিডিও, এটা পিওর ফান ভিডিও। রিল্যাক্স।" লিখে কমেন্ট করেছেন।
অর্থাৎ বলা যায় ভিডিওটি গত প্রায় চার বছর কোনো ডিসক্লেইমার ব্যতীত ফেসবুকে বিদ্যমান ছিল এবং পরবর্তীতে চলতি বছরের গত ২৩ আগস্ট চাঁদে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণের পরে ভিডিওটি একই ক্যাপশনে পুনরায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সম্প্রতি আলোচিত দাবিটি 'Shanjidul Alam Seban Shaan' এর পোস্ট থেকে যে ছড়িয়েছে, কয়েকটি পোস্ট দেখে তা বোঝা যায়। দেখুন--
ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই তাদের পোস্টের ক্যাপশনে "Video: Shanjidul Alam Seban Shaan" উল্লেখ করেছেন। এমনকি তাদের পোস্টের সাথে যুক্ত ভিডিওতেও অনেক ক্ষেত্রে "Video: Shanjidul Alam" ওয়াটারমার্ক উল্লেখ করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভারতের বেঙ্গালুরে চলাচলের অনুপযোগী সড়ক সম্পর্কে পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শিল্পী বাদল নানজুনদাস্বামী ২০১৯ সালে এই স্যাটায়ার ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি'তে স্থিরচিত্র সহ ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত "Astronaut To Reach Civic Body" শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, "বেঙ্গালুরের রাস্তায় একজন শিল্পী শহরের রাস্তার গর্তগুলো সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য ভিডিওটি নির্মাণ করেছেন। এটি ধারণ করা হয়েছে উত্তর বেঙ্গালুরুর তুঙ্গানগর প্রধান সড়ক থেকে। ভিডিওটি পোস্ট করেছেন স্ট্রিট আর্টিস্ট বাদল নানজুনদাস্বামী।" প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভারতীয় ম্যাগাজিন আউটলুক ইন্ডিয়া এর অনলাইনে ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত "An ‘Astronaut’ Moonwalks On A Busy Bengaluru Street. Here’s Why" শিরোনামের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "এটি বেঙ্গালুর ভিত্তিক শিল্পী বাদল নানজুনদাস্বামীর একটি ভিডিও, এতে দেখা যাচ্ছে মহাকাশচারীর পোশাক পরা একজন ব্যক্তি শহরের রাস্তার গর্তের উপর দিয়ে হাঁটছেন যা চাঁদের পৃষ্ঠ হিসাবে দেখানো হয়েছে। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।"
প্রাপ্ত তথ্য থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটারে) 'baadal nanjundaswamy' একাউন্টে ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচ্য ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি পোস্ট করে সেখানকার (Bruhat Bengaluru Mahanagara Palike) এর চীফ কমিশনার ও মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে দেখা যায় তাকে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ভারতের বুম বাংলা থেকে বাদল নানজুনদাস্বামীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, "চন্দ্রযান-২ মিশনের সময় বেঙ্গালুরুর রাস্তায় গর্তের প্রতি পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে আমি এই ভিডিও রেকর্ড করেছিলাম। উত্তর বেঙ্গালুরের তুঙ্গানগরের কাছে ভিডিওটি তোলা হয়"।
এছাড়াও তার এক্স (সাবেক টুইটার) প্রোফাইলে বিভিন্ন সময়ে সড়ক কিংবা বিভিন্ন স্থাপনায় তাঁর আঁকা নানাবিধ স্ট্রিট আর্ট এর ছবি পাওয়া যায়।
অর্থাৎ ২০১৯ সালে অনুপযোগী সড়ক সম্পর্কে পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শিল্পী বাদল নানজুনদাস্বামী ভারতের উত্তর বেঙ্গালুরের তুঙ্গানগর প্রধান সড়ক থেকে ভিডিওটি ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছেন।
সুতরাং ফেসবুকে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত চাঁদে নভোচারী পাঠালো দাবিতে একটি স্ক্রিপ্টেড স্যাটায়ার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।