বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, গতরাতে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি, বিএনপি বা জামায়াত জড়িত বলে দাবিটি সঠিক নয়।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
কয়েক ঘন্টা আগে 'Bappu Ahammed' নামের একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে পোস্ট করে লেখা হয়, "বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ৪টি বগিতে আগুন দিয়েছে বিএনপির জামাতের আগুন সন্ত্রাসীরা। এই পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিস্তারিত আসতেছে..."। পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। বেনাপোল এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারা জড়িত ছিলো এব্যাপারে এখনো নিশ্চিত করে জানা যায়নি বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাই, ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি বা জামায়াত জড়িত তা প্রচার করা বিভ্রান্তিকর।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ৫ জানুয়ারি "ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে আসা ট্রেনে আগুন, ৪ জনের মৃত্যু" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি র্যাব। মি. মঈন বলেন রেল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তদন্ত করছে, পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এ নিয়ে কাজ করছে।" (র্যাবের গণমাধ্যম পরিচালক খন্দকার আল মঈন)। অর্থাৎ বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে কে বা কারা অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ৬ জানুয়ারি (আজ) সকাল ১০ টায় আপডেট করা "ঢাকায় আবার চলন্ত ট্রেনে আগুন, প্রাণ গেল চারজনের" শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, "গতকাল রাত ১১টার কিছু পরে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধারকাজ চলমান। তা শেষ হলে বলা যাবে মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রেনটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকতে পারে। আবার বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেও আগুন লাগতে পারে। তদন্তের পর আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।" অর্থাৎ, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনের ঘটনায় কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত নাকি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, সেটিও এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এছাড়াও, রাজনৈতিক কোনো দলের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতার কথাও কেউ বলেননি। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, দৈনিক পত্রিকা কালের কণ্ঠের ওয়েবসাইটে ৬ জানুয়ারি "ট্রেনে নাশকতার আগুনে ৪ মৃত্যু" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, এই অগ্নিকাণ্ড যে নাশকতা সেটি স্পষ্ট। এটা ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যারা এটি করেছে তাদের শিগগিরই খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত শুরু হয়েছে।...... র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রাত সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এটি দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুন। তবে আমাদের গোয়েন্দারা তদন্ত করছেন। ট্রেনের চালকসহ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি, কিভাবে আগুনটি লেগেছে।’...... রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি নাশকতা নাকি ট্রেনে গোলযোগ, যাচাই করা হচ্ছে।" অর্থাৎ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এবং রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান যে, বেনাপোল এক্সপ্রেসে কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি, জামায়াত বা কোনো নির্দিষ্ট দল বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্যটিও সঠিক নয়। স্ক্রিনশট দেখুন--
উল্লেখ্য গতকাল ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়।
সুতরাং বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিহীন দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে; যা বিভ্রান্তিকর।