ছবিগুলো বাংলাদেশি কোনো অসুস্থ শিশুর নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিগুলো ভারতের অসুস্থ শিশু সায়ান্তিকার, তাকে বাংলাদেশি দাবি করে সাহায্য চাওয়া প্রতারণামূলক।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, অনু মহন্ত অনেকদিন ধরে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার চিকিৎসার জন্য ৭/৮ লাখ টাকার প্রয়োজন। দেখুন এমন কিছু পোস্ট এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৫ অক্টোবর 'Adnan Ahnaf' নামের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি ছবিসহ একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে বলা হয়, গাইবান্ধার বাসিন্দা রুদ্র মহন্তর সন্তান অনু মহন্ত ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার চিকিৎসার জন্য এ মুহুর্তে ৭/৮ লাখ টাকার প্রয়োজন। এছাড়া আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য মোবাইলে অর্থ লেনদেন সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশের একাউন্ট খোলা একটি ফোন নম্বরও উল্লেখ করা হয় সেই পোস্টে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, একটি শিশু হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে, তার পাশে এক মহিলা ও পুরুষকেও দেখা যাচ্ছে। দেখুন সেই পোস্টটি--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিগুলো বাংলাদেশের কোনো শিশুর নয়। ছবিগুলো মূলত সায়ান্তিকা নামের ভারতের এক অসুস্থ শিশুর। রিভার্স ইমেজ সার্চিং টুল ব্যবহার করে ছবিগুলো একাধিক সামাজিক মাধ্যমসহ একটি ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্যসহ পাওয়া গেছে।
গত ২০২১ সালের ২১ আগস্ট 'Ketto' নামের একটি ক্রাউডফান্ডিং সংস্থা তাদের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে চারটি ছবিসহ একটি পোস্ট করা হয় যার ক্যাপশনে লেখা "My 12-yo daughter is dying from kidney disease"। অর্থাৎ আমার ১২ বছরের মেয়েটি কিডনি রোগে আক্রান্ত । এছাড়া কমেন্টে সাহায্যের আবেদন সংক্রান্ত একটি লিংকও পোস্ট করা হয়। দেখুন সেই পোস্টটি--
পরবর্তীতে মুম্বাইভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং ওয়েবসাইট 'কিটো'তে ছবিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, অসুস্থ শিশুটির নাম সায়ান্তিকা, সে কিডনির জটিলতায় ভুগছে। ওই ওয়েবসাইটে শিশুটির রোগের বিবরণ, চিকিৎসাপত্র সহ প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র যুক্ত করা আছে। পাশাপাশি, এই অসুস্থ শিশুকে সাহায্যের আর প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করা হয়েছে ওয়েবসাইটে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অপরদিকে ফেসবুকে পোস্ট করা সাহায্যের আবেদনগুলোতে ছবিগুলো বাংলাদেশি মেয়ে বলে দাবি করা হলেও সেখানে কোনো কিছুর বিস্তারিত উল্লেখ নেই। অনু মহন্ত নামে নামে আদতে কোনো অসুস্থ শিশুর অস্তিত্ব আছে কিনা সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি বুম বাংলাদেশ। ফেসবুক পোস্টে দেয়া মোবাইল নম্বরটিতে যোগাযোগ করলে প্রথমে এক ব্যক্তি কল রিসিভ করলেও প্রশ্ন শুনে সেটি বন্ধ করে দেন। আবার খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করলেও সেখানে এই মুহুর্তে এরকম কোনো শিশু ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন না বলে জানানো হয়।
অর্থাৎ ভারতের অসুস্থ শিশুর ছবিকে বাংলাদেশি দাবি করে আর্থিক সাহায্য চাওয়া হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারণামূলক।