রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর ছবি বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, রোহিঙ্গা নারীর কোলে থাকা শিশুর এই ছবিটি ২০১৭ সালে এপি'র সাংবাদিক দার ইয়াসিন ধারণ করেছিলেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে নারীর কোলে এক শিশুর একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ছবিতে দেখতে পাওয়া ২ মাসের বাচ্চা নিয়ে শপিংয়ে যাওয়া ফলে প্রচণ্ড গরমে মায়ের কোলেই বাচ্চার মৃত্যু হয়। দাবি করা হয় ঘটনাটি কুমিল্লার চান্দিনায় এলাকার। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৫ এপ্রিল 'GK Tahmid' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, "২ মাসের বাচ্চা নিয়ে মায়ের শপিং। প্রচন্ড গরমে মায়ের কোলেই বাচ্চার মৃত্যু। শপিংয়ের মনোযোগে বুঝতেই পারে নি "মা"। ঘটনা কুমিল্লার চান্দিনায়। আল্লাহ এই ধরনের মানুষ কে হেদায়েত দান করুন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ছবিটি সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয় বরং ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সময়ে ধারণ করা।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করার পর, বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসে (এপি) "Nearly 3 weeks into Rohingya crisis, refugees still fleeing" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে ছবিটি যুক্ত করতে দেখা যায়, যা ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে চিত্রগ্রাহক পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী চিত্রসাংবাদিক দার ইয়াসিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই ছবিটি দ্য টাইম সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। এপি'র স্ক্রিনশট দেখুন--
ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিম নারী হানিদা বেগম মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী শাহ পরীর দ্বীপে পৌছানোর আগে তাদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে গেলে, ওই নারীর শিশুছেলে আবদুল মাসুদ মারা যায়। ছবিতে মা হানিদা বেগম মৃত সন্তান মাসুদকে এভাবেই চুমু দিচ্ছিলেন।
অর্থাৎ ছবিটি কুমিল্লার কোনো ঘটনার নয় বরং রোহিঙ্গা সংকটের সময়ের ছবি এটি।
এদিকে, কুমিল্লায় শিশু মৃত্যুর তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।
পোস্টগুলোতে ঘটনাটি কুমিল্লা চান্দিনায় ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। পাশাপাশি এরূপ ঘটনা সম্পর্কিত কোনো খবরও জাতীয় বা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি। চান্দিনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের চান্দিনা প্রতিনিধি মো. আব্দুল বাতেন শিশুমৃত্যুর এই তথ্যটি ফেসবুকে পোস্ট করে চলতি রমজান মাসে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি গত বছর এরকম একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও গণমাধ্যমে এই ঘটনারও কোনো বিবরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বুম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কুমিল্লার চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) সাহাবুদ্দীন খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাঁর আওতাধীন এলাকায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটার তথ্য পাননি বলে জানান।
অর্থাৎ শিশু মৃত্যুর তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।
সুতরাং রোহিঙ্গা শিশুর ছবি প্রচার করে কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার ২ মাস বয়সি শিশুর মৃত্যুর বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।