না, এটি কার্টুনিস্ট লার্স ভিকস নিহত হওয়ার দুর্ঘটনার ছবি নয়
বুম বাংলাদেশ দেখেছে, ছবিটি নিউজিল্যান্ডের এক সড়ক দুর্ঘটনার, আর মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকা এই কার্টুনিস্ট নিহত হন সুইডেনে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনকারী লার্স ভিকসের মৃত্যুর খবরের সাথে একাধিক ছবি যুক্ত করে প্রচার করা হচ্ছে। দেখুন এমন একটি পোস্ট এখানে।
গতকাল ৫ অক্টোবর 'Anny Khan' নামের ফেসবুক একটি পেজ থেকে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকা কার্টুনিস্ট লার্স ভিকসের মৃত্যুর খবর পোস্ট করা হয়। উক্ত পোস্টের সাথে তিনটি ছবি যুক্ত করা হয়, যার প্রথম ছবিতে একটি কাঠবোঝাই ট্রাক ও একটি প্রাইভেট গাড়ি মুখোমুখি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির ইনসেটে লার্স ভিকসের ছবি জুড়ে দেয়া আছে। অর্থাৎ দেখে মনে হচ্ছে, লার্স ভিকসের নিহত হওয়ার দুর্ঘটনার ছবি এটি। এছাড়া পোস্টে উল্লেখ করা হয়, সুইডিশ এই কার্টুনিস্ট আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
প্রথম ছবিটি আলাদাভাবে দেখুন এখানে--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, কাঠবোঝাই ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষের ছবিটি কার্টুনিস্ট লার্স ভিকসের নিহত হওয়ার দুর্ঘটনার নয়। উক্ত ছবিটি পুরোনো এক ভিন্ন দুর্ঘটনার।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, ছবিটি ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে টকোরোয়া এলাকার একটি সড়ক দুর্ঘটনার ছবি। নিউজিল্যান্ডভিত্তিক গণমাধ্যম 'নিউজ হেরাল্ড'-এ এই ছবিটিসহ একটি খবর প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, যার শিরোনাম ছিল Truck driver in crash that killed tourist family 'really shaken up'। দেখুন--
খবরটিতে বলা হয়, হংকং বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ওয়ারেন লী ও এসোন লী দম্পতি তাঁদের কন্যা জুলিয়া লীকে তাঁর নিউজিল্যান্ডের বাসায় সাহায্য করতে এসেছিলেন। সেখানেই এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের তিনজনই নিহত হন এবং তাদের পুত্রকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় এক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
পরবর্তীতে একই খবর একই ছবিসহ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য স্যালোন ডটকম। খবরটির স্ক্রিনশট দেখুন--
দ্য সালোনের খবরটি পড়ুন এখানে। তৎকালে খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টেও প্রকাশিত হয়। দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত আরেকটি সংবাদে জানা যায়, আইসিইউতে থাকা লী দম্পতির একমাত্র পুত্রও মারা যান। খবরটি প্রকাশিত হয় অটাগো ডেইলি টাইমস নামক নিউজিল্যান্ডের একটি স্থানীয় পত্রিকায়। খবরটি পড়ুন এখানে।
অন্যদিকে কার্টুনিস্ট লার্স ভিকস সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সুইডেনে। গত ৪ অক্টোবর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত 'লার্স ভিকস: ইসলামের নবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকা কার্টুনিস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত' শিরোনামে এ সংক্রান্ত এক খবরে বলা হয়, "মি. ভিকস পুলিশের একটি গাড়িতে চড়ে সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মার্কইয়ার্ড শহরে ভ্রমণ করছিলেন এবং সেই সময় একটি ট্রাকের সাথে গাড়িটির সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে পুলিশের দু'জন কর্মকর্তাও নিহত হন। আর আহত হন ট্রাকটির ড্রাইভার।" দেখুন--
এছাড়া সুইডেনের একাধিক স্থানীয় পত্রিকাতেও ঘটনাটিকে 'সড়ক দুর্ঘটনা' হিসেবেই প্রকাশ করে। দ্য লোকাল নামে সুইডেনের স্থানীয় পত্রিকার প্রকাশিত একটি খবর দেখুন--
খবরটি পড়ুন এখানে। অর্থাৎ ভাইরাল পোস্টে করা "সুইডিশ কার্টুনিস্ট লার্স ভিকস আগুনে পুড়ে মারা গেছেন" এমন দাবিটিও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সুতরাং ভাইরাল এই পোস্টটিতে কার্টুনিস্ট লার্স ভিকসের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে এবং ভিন্ন দেশে ঘটা ভিন্ন একটি সড়ক দুর্ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।